সাইন্স ফিকশন: অতীত

–   মামুন হাসান এক এক কন্ট্রোল প্যানেলের সামনে গম্ভীরভাবে বসে আছেন ক্যাপ্টেন তাশান | চিন্তার ভাজ পড়ে আছে তার কপালে |শীতাতল নিয়ন্ত্রি...

 মামুন হাসান

এক
এক কন্ট্রোল প্যানেলের সামনে গম্ভীরভাবে বসে আছেন ক্যাপ্টেন তাশান | চিন্তার ভাজ পড়ে আছে তার কপালে |শীতাতল নিয়ন্ত্রিত কক্ষে থাকার পরও তার নাকের ডগায় ও কপালে জমে আছে বিন্দু বিন্দু ঘাম | ভাবনার গভীরে ডুবে আছেন তিনি | মাথা কাজ করছেনা তার | অদ্ভুত কিছু | ঘটনা ভাবিয়ে তুলছে তাকে | ভাবনার কোন কূল কিনারা করতে পারছেন না তিনি | নিজের মস্তিষ্ক যেন প্রতারণা করছে তার সাথে | একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন তিনি মনিটরের দিকে |সেখানে তার নভোযানের গতিবিধির বিবরণ দেয়া আছে কিছু সাংকেতিক ভাষায় | নভোযানটি নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি | কোন কিছুই ঠিকমত হচ্ছেনা | যেন অন্য কেউ এর নিয়ন্ত্রণ করছে | মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের সাথে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করতে গিয়ে ব্যার্থ হয়েছেন | তার চিন্তাভাবনার মূলে এখন একটাই বিষয়-নভোযানটিকে নিয়ন্ত্রণে এনে একে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা | সেই দিকে লক্ষ রেখেই প্রাণপনে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি | দলের অন্যসব সদস্যদের সহযোগীতা থাকলে কাজটা বেশ সহজ হতো | মনে মনে ভাবলেন ক্যাপ্টেন | একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি | তা আর সম্ভব নয় | দলের সবাই তার বিরোধীতা করছে | নিরাপত্তার খাতিরে তাদের সবাইকে আলাদা একটা কক্ষে আটকে রেখেছেন তিনি | একঝাক মেধাবী লোকগুলো এখন আর কোন কাজেই আসবেনা তার | অবশ্য এছাড়া অন্য কোন উপায় ও ছিলনা | তিনি এই মিশনের ক্যাপ্টেন | মহাকাশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ এবং দক্ষ একজন লোক তিনি | যে কোন বিষয়ে তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত | অধীনস্ত কেউ বিদ্রোহী হয়ে উঠলে প্রয়োজনে তাকে খুন করে ফেলার অনুমতিও ক্যাপ্টেনকে দিয়েছে মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র | তিনি খুন খারাবির মধ্যে যান নি | শুধুমাত্র আটকে রেখেছেন |

দুই
কয়েকটা বোতাম স্পর্শ করতেই মনিটরে একটা দৃশ্য ভেসে উঠল | বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে তারা | সবার চেহারায় এক ধরনের হতাশার ছায়া দেখতে পেলেন ক্যাপ্টেন | রাইয়ান নামের অল্পবয়েসী ছেলেটা যে নেতৃত্ব দিয়েছিল অন্যদের কোয়ার্টজের জানালায় হাত রেখে দাড়িয়ে তাকিয়ে আছে বাইরে | এই অন্ধকার মহাশূন্যের মাঝে কি দেখছে কে জানে | ছেলেটা বেশ সাহসী এবং বুদ্ধিমান | অনেক সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে এর মাঝে | মনে মনে ভাবলেন ক্যাপ্টেন | প্রবীণ পদার্থবিজ্ঞানী দুজন-কিম আর তানা উদাস ভঙ্গিতে হাটু গেড়ে বসে আছেন | খুবই কাজের লোক এরা | ক্যাপ্টেনের ধারনা এখনও নিশ্চয়ই পদার্থবিদ্যার কোন সমস্যা নিয়ে ভাবছে তারা | গণীতবিদ বেমুন আর চিকিৎসক ক্লনকে ও দেখা গেল | দেখা গেল নভোযানের ইঞ্জিনিয়ারদের |

“এরা সবাই এখন আমার কাছে সোনার টুকরা | সবাইকেই এখন দরকার, খুবই দরকার |” মনে মনে বললেন ক্যাপ্টেন |

তাদেরকে যে কক্ষে আটকে রাখা হয়েছে সেখানকার দেয়ালে বসানো হলো গ্রাফিক স্ক্রীন অন করলেন ক্যাপ্টেন |মাইক্রোফোন মুখের সামনে এনে কথা বলতে লাগলেন তিনি | “আমার প্রিয় সহকর্মী বন্ধুগন, আমার ইতোপূর্বের ব্যাবহারের জন্য আমি লজ্জিত | সত্যি বলতে আমার আর অন্য কোন উপায় ছিলনা | ‘আপনারা প্রত্যেকেই অত্যন্ত বিচক্ষণ এবং নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পক্কে সচেতন | মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র আমাদের যে দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছে, আমাদের উচিত তা সঠিকভাবে পালন করা  | ‘আমি আশা করব আপনারা এখন আর বিরোধীতা করবেন না | আমাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে আমরা পৃথিবীতে ফিরে যাব | ‘সবাই নিদ নিজ দায়িত্ব পালন করে আমাকে সাহায্য করুন |আমাদের নভোযান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে প্রায় | এই মূহুর্তে আপনাদের সহযোগীতা খুবই প্রয়োজন | দয়া করে সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হোন | আপনারা রাজী হলে আমি এক্ষুনি সবাইকে মুক্ত করে দিব| ” “চুপ কর বুড়ো ভাম | সরোষে বলল রাইয়ান | রাগে মুখ শক্ত হয়ে গেছে তার | “এখন রাগ করার সময় নয় রাইয়ান | শান্ত হও | আমাদের এখন বিপদ | যেকোন মূহুর্তে আমাদের নভোযান বিস্ফোরিত হতে পারে | এখন সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে |”বললেন ক্যাপ্টেন | দাড়ি কামানো মসূণ গালে হাত বুলালেন তিনি | “আমি আগেই ডার্ক হোলে ঢুকতে মানা করেছিলাম | আমাদের সবার কথা উপেক্ষা করে আপনি ডার্কহোলে ঢুকিয়েছেন নভোযানটা | এবার যা করার আপনিই করুন | আমাদের আর কিছুই করার নেই |” বলল রাইয়ান | চোখ পিটপিট করে তাকালেন ক্যাপ্টেন | শান্ত ভঙ্গিতে বললেন, “নভোচারীরা এভাবে কথা বলেনা ছেলে | তারা হয় নির্ভীক|বিপদে তারা কখনো পিছু হটেনা | ‘আমাদের উপর যে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে, তা সঠিকভাবে পালন করাই আমাদের কাজ | ডার্ক হোলের অপর পাশে যেতেই হবে আমাদের |” “এটা তো আমাদের কাজ ছিলনা | একটা সফল মিশন শেষে ফিরে যাচ্ছিলাম আমরা | মাঝপথে হঠাৎ করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা একটা দায়িত্ব দিয়ে বসবেন আর আপনি তা বিনাদ্বিধায় মেনে নিবেন ? আমাদের মতামত নেওয়ার ও কোন প্রয়োজন মনে করলেন না ? ক্রুদ্ধস্বরে কথাগুলো বলল রাইয়ান|রাগে ফুসছে সে | “আপনি পৃথিবীতে ফিরে চলুন | সবরকমের সহযোগীতা পাবেন আমাদের কাছ থেকে | “বললেন পদার্থবিজ্ঞানী কিম | তার কথায় সায় দিল অন্যরা | “ক্যাপ্টেন , আপনার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে আপনার এবং আমাদের সকলের প্রাণ | ‘ডার্ক হোল নিয়ে তেমন কোন গবেষণা হয় নি এখনো |
আমরা কেউ জানিনা কি আছে সে খানে, কি হতে পারে সে সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই কারো | তাই সম্ভাব্য কোন বিপদের মধ্যে ঝাপিয়ে পড়তে পারিনা আমরা | যেহেতু আমরা আমাদের মিশন শেষ করেছি, এখন সময় ফিরে যাওয়ার |নতুন মিশনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত নই কেউ আমরা | ‘একথা আগেও বলেছি আপনাকে | কিন্তু কারো কথায় ভ্রুক্ষেপ করেননি আপনি, নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থেকেছেন | ‘এখনো সময় আছে ক্যাপ্টেন, আপনি মত পাল্টান | নভোযান ঘুরিয়ে নিন পৃথিবীর দিকে | আমরা আপনার পাশে আছি | ” বললেন অপর পদার্থবিজ্ঞানী |
সুইচ টিপে মনিটর বন্ধ করে দিলেন ক্যাপ্টেন | এদের সাথে কথা বলে কোন লাভ নেই | অযথা সময় নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই হবেনা | এদেরকে না এনে কতকগুলো রোবট নিয়ে এলেই বোধহয় ভাল হত | রাগে ফোসফোস করতে লাগলেন ক্যাপ্টেন | দুইহাতে নিজের চুলের মুঠি ধরে ঝাকালেন তিনি | সজোরে কিল মারলেন কালো গ্রানাইটের টেবিলটার ওপর | মেজাজ বিগড়ে গেছে তার |
তিন
এইমাত্র ঘুম ভাঙল ক্যাপ্টেন তাশানের | কাজ করতে করতে কন্ট্রোল রুমেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন যেন কখন | নিজের কক্ষে যাবারও অবকাশ পাননি |
প্রাকৃতিক কাজ সেরে গোসল করে এলেন ক্যাপ্টেন | তাক থেকে কাপড় নামিয়ে দ্রুত পরিধান করে নিলেন | প্রতিদিনকার অভ্যাসমতো আয়নার সামনে দাড়িয়ে মাথা আচঁড়াতে গিয়ে থমকে দাড়ালেন তিনি | এখন অতকিছুর সময় নেই | হাতে অনেক কাজ তার | হাত দিয়ে এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করতে করতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন | ফুড স্টোরে গিয়ে ঝটপট করে নাস্তার পাট চুকিয়ে এক মগ গরম কফি পান করে শরীরটা চাঙ্গা করে নিলেন | তারপর কন্ট্রোলরুমে এসে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসলেন | মনিটরের দিকে তাকাতেই ভ্রূ কুচকে গেল তার|নভোযানের বর্তম্ন গতিবেগ আলোর বেগের চেয়েও বেশী | “এটা কিভাবে সম্ভব ?” নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলেন যেন | মাথা তালগোল পাকিয়ে গেল তার | ভুল দেখছেন না তো ? ভাবলেন তিনি | আবার খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলেন মনিটরের পর্দায় ভেসে থাকা তথ্যগুলো | নিশ্চিত হতে পারলেন যে,  তিনি ভুল কিছু দেখেননি | নানান প্রশ্ন উকি দিল তার মাথায় | গতি বাড়ল কিভাবে ? বাড়ালই বা কে ? আর এমন অবিশ্বাস্য পরিমাণ গতি কিভাবে সম্ভব ? কোন মহাজাগতিক প্রাণীর কাজ নয় তো ? নাকি কোন গ্রহের শক্তিশালী মহাকর্ষীয় বলের প্রভাব ? ভেবে পেলেন না তিনি কিছু | মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেন ক্যাপ্টেন | কোন লাভ হলোনা তাতে | বহুকষ্টে মাথা ঠান্ডা রাখলেন তিনি | এইসময় উত্তেজিত হলে চলবেনা |  নভোযানের গতি কমাতে শুরু করলেন ক্যাপ্টেন | কমাতে কমাতে একসময় শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনলেন গতি | তারপরও নভোযান ছুটে চলছে দুরন্ত গতিতে | কোন এক শক্তিশালী আকর্ষনের প্রভাবে ছুটে যাচ্ছে অজানা গন্তব্যে | মনিটরে দেখা যাচ্ছে আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ভেসে আছে ছোট বড় অসংখ্য পাথরখন্ড|কোন এক মহাজাগতিক বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে যাওয়া কোন গ্রহের অংশবিশেষ হবে হয়তো | এমন সময় মনিটরে ছোটখাট একটা গ্রহাণু দেখা গেল | একদম নভোযানের সোজাসুজি | চোখের পলক ফেলার আগেই সংঘর্ষ হলো ওটার সাথে | নভেযানের সামনের বেশ কিছু অংশ-কন্ট্রোলরুমের অর্ধেক পর্যন্ত ভেঙ্গে উড়ে গিয়ে হারিয়ে গেল কোথাও | বাকী অংশ খাড়া নিচের দিকে নামতে লাগল | চেয়ার থেকে ছিটকে গিয়ে পেছনে দেয়ালের সাথে সজোরে ধাক্কা খেলেন ক্যাপ্টেন | বায়ুয উর্ধমুখী চাপের প্রভাবে দেয়ালের সাথে সেঁটে রইলেন তিনি | চোখ মেলতে পারছেন না তিনি বাতাসের তীব্র ধাক্কার কারণে | জীবনের প্রথম মৃত্যুর কথা স্মরণ করলেন তিনি | এবং প্রস্তুত হয়ে রইলেন মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্য | অল্পসময়ের মধ্যে অনেক ধরনের ভাবনা খেলা করল তার মাথায় | চোখে ভেসে উঠল অনেক দৃশ্য | মানুষের জীবন কত অদ্ভুত ! ভাবলেন ক্যাপ্টেন | স্বল্প সময়ের ন্য পৃথিবীতে আসা, কিছুদিন বসবাস করা ।
তারপর আবার চলে যাওয়া | আচ্ছা মানুষ পৃথিবীতে আসে কোত্থেকে ? আর যায়ই বা কোথায় ? আগে তো কখনো ভেবে দেখেননি তিনি | জীবনের পঞ্চান্নটা বছর কাটিয়ে দিয়েছেন তিনি | কতশত পড়াশোনা, কত গবেষণা করলেন, কত নতুন নতুন গ্রহ আবিষ্কার করলেন অথচ এই ব্যাপারটা ভেবে দেখেননি কোনদিন | ভাবতেই হাসি পেল তার |
চোখ বন্ধ করে আছেন ক্যাপ্টেন | আশেপাশে কি হচ্ছে, কি আছে তা দেখার কৌতুহল অনুভব করলেন তিনি | চোখ মেলে তাকাবেন কিনা ভাবছেন | সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না এখনো | দটানায় ভুগছেন | অবশেষে চোখ খুললেন তিনি | নীচে একটা গ্রহ দেখতে পেলেন | নীল গ্রহ | দেখতে অনেকটা পৃথিবীর মত লাগছে | আগে, যুবক বয়সে , প্রথম প্রথম যখন তিনি নভোচারী হয়ে মহাকাশভ্রমণে যেতেন তখন অত্যন্ত কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে থাকতেন পৃথিবীর দিকে | ঐ সময় মহাকাশ থেকে যেমন দেখাত পৃথিবীকে, ঠিক তেমনটাই দেখাচ্ছে এখন | বাতাসের দমক অনেকটা কমে এলেও বেশীক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলেন না ক্যাপ্টেন | চোখ বুজে ফেললেন আবার | অচেনা এই গ্রহ নিয়ে ভাবতে লাগলেন ক্যাপ্টেন | কেমন হবে এই গ্রহ ? এট কি প্রাণ ধারনের উপযুক্ত হবে ? এখানে কি পানি আছে ? অক্সিজেন আছে বায়ুতে ? কোন মহাজাগতিক প্রাণী আছে কি এই গ্রহে ? যদি থাকে, কেমন হবে তারা ? বুদ্ধিমান নাকি নির্বোধ ? শান্তিপ্রিয় নাকি নৃশংস ও ভয়ংকর ? কেমন হবে ? কেমন ? কেমন হতে পারে ? কেমন হওয়া উচিত ? ক্যাপ্টেন জানেন না কিছু | গ্রহটাতে কি নামতে পারবেন ? ভাবলেন তিনি | যখন নিচে নামবেন , বিশাল এই নভযানের নিচে চাপা পড়ে চ্যাপ্টা হয়ে যেতে হবে তাকে | “আরে আশ্চর্য ব্যাপার ! আমি নিঃশ্বাস নিচ্ছি কিভাবে ! এখানে কি অক্সিজেন আছে নাকি !” বিস্ময়ের চূড়ান্তে পৌছলেন ক্যাপ্টেন | অবাক হয়ে তিনি লক্ষ করলেন খুব স্বাচ্ছন্দে তিনি শ্বাস নিতে পারছেন | মহাকাশে যা অস্বাভাবিক এবং রীতিমত অসম্ভব ব্যাপার | অনেক ভেবেও তিনি বুঝতে পারলেন না কি এর কারন |
চার
পড়ন্ত বিকেল | এই সময়টায় সাধারনত কোন কাজ থাকেনা | আর কাজ না থাকলে ঘুমিয়ে থাকে তারা সবাই | বরাবরের মতো আজও তারা ঘুমিয়ে আছে সবাই | হঠাৎ বিকট এক শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল তাদের | অল্পতেই ভয় পায় তারা | উত্তেজিত হয়ে ওঠে | এবারও তার ব্যতিক্রম হলোনা | আতঙ্কগ্রস্ত হলে সবাই | উত্তেজিত হয়ে গুহা থেকে বের হয়ে এল তারা একে একে | ব্যাপক হৈ চৈ শুরু করে দিল | ওপর থেকে বিশালকায় কিছু একটা নেমে আসছে | জিনিসটার সাথে পরিচিত নয় তারা | যেদিক দিয়ে নামছে ওটা, দৌড়ে সেদিকে যেতে লাগল সবাই | চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট, মনে কৌতুহল |
বুদ্ধিমান নাকি নির্বোধ ? শান্তিপ্রিয় নাকি নৃশংস ও ভয়ংকর ? কেমন হবে ? কেমন ? কেমন হতে পারে ? কেমন হওয়া উচিত ? ক্যাপ্টেন জানেন না কিছু | গ্রহটাতে কি নামতে পারবেন ? ভাবলেন তিনি | যখন নিচে নামবেন , বিশাল এই নভযানের নিচে চাপা পড়ে চ্যাপ্টা হয়ে যেতে হবে তাকে | “আরে আশ্চর্য ব্যাপার ! আমি নিঃশ্বাস নিচ্ছি কিভাবে ! এখানে কি অক্সিজেন আছে নাকি !” বিস্ময়ের চূড়ান্তে পৌছলেন ক্যাপ্টেন | অবাক হয়ে তিনি লক্ষ করলেন খুব স্বাচ্ছন্দে তিনি শ্বাস নিতে পারছেন | মহাকাশে যা অস্বাভাবিক এবং রীতিমত অসম্ভব ব্যাপার | অনেক ভেবেও তিনি বুঝতে পারলেন না কি এর কারন |
চার পড়ন্ত বিকেল | এই সময়টায় সাধারনত কোন কাজ থাকেনা | আর কাজ না থাকলে ঘুমিয়ে থাকে তারা সবাই | বরাবরের মতো আজও তারা ঘুমিয়ে আছে সবাই | হঠাৎ বিকট এক শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল তাদের | অল্পতেই ভয় পায় তারা | উত্তেজিত হয়ে ওঠে | এবারও তার ব্যতিক্রম হলোনা | আতঙ্কগ্রস্ত হলে সবাই | উত্তেজিত হয়ে গুহা থেকে বের হয়ে এল তারা একে একে | ব্যাপক হৈ চৈ শুরু করে দিল | ওপর থেকে বিশালকায় কিছু একটা নেমে আসছে | জিনিসটার সাথে পরিচিত নয় তারা | যেদিক দিয়ে নামছে ওটা , দৌড়ে সেদিকে যেতে লাগল সবাই | চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট , মনে কৌতুহল |
পাঁচ
নভোযানটি পতিত হলো একটা হ্রদের ওপর | ওপর থেকে ধেয়ে আসছিল ওটা | হঠাৎ একসময় শীতল পানির স্পর্শ পেলেন ক্যাপ্টেন | সাথে সাথে তার মনে হলো পিঠের ওপর যেন আস্ত একটা পাহাড় ধ্বসে পড়েছে | বায়ুর চাপের কারনে এতক্ষণ নভেযানের ভর অনুভব করেননি তিনি | পানিতে পড়ার পরপরই বায়ুর চাপ সরে যায় এবং সমস্ত ভর গিয়ে পড়ে ক্যাপ্টেনের ওপর | এক ধাক্কায় একেবারে হ্রদের তলদেশে চলে গেলেন ক্যাপ্টেন | তার পেছন পেছন ধেয়ে আসছে নভোযানের খন্ডিত অংশটি | পুরো হ্রদের পানি আন্দোলিত হচ্ছে | এক্ষুণই তার ওপর এসে পড়বে দৈত্যাকার বস্তুটি | পিষে একদম পানির নিচের কাঁদাপানির সাথে মিশিয়ে ফেলবে তাকে | দম বন্ধ হয়ে আসতে চাইল ক্যাপ্টেনের | সাতঁরে সরে যাওয়ার সময়টুকুও নেই তার হাতে | চোখ বন্ধ করে মৃত্যুর ক্ষণ গুনকে শুরু করলেন তিনি | কয়েক সেকেন্ট কেটে গেল |ঘটলোনা কিছুই | চোখ মেলে উপরে তাকালেন তিনি পানিতে ভাসতে ভাসতে | যা ভেবেছেন তা হয়নি | নভোযানটি খাড়া নিচের দিকে নামছে না | কাত হয়ে গেছে ওটা | আস্তে আস্তে ভেসে ভেসে নিচে নামছে | খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলেন ক্যাপ্টেন | নতুন করে জীবন ফিরে পেয়েছেন যেন | সাতঁরে সরে গেলেন ওটার নিচ বরাবর অবস্থান থেকে | তারপর উঠে এলেন ওপরে | 
হ্রদের তীড়ে উঠেই ক্যাপ্টেনের চক্ষুচড়ক গাছ | শতশত লোক দাড়িয়ে আছে তার সামনে | কাপড় বলতে কিছু নেই তাদের শরীরে , সম্পূর্ন নগ্ন | অবাক বিষ্ময়ে চেয়ে আছে তার দিকে | ঐ লোকগুলো তাকে দেখে যতটা না অবাক হয়েছে, তার চেয়ে বেশী অবাক হয়েছেন ক্যাপ্টেন নিজে | কোথায় এসেছেন তিনি ? কোন গ্রহে ? এখানে মানুষ এল কোত্থেকে ? আর তাদের এই অবস্থা কেন ? পৃথিবীর সাথে এই গ্রহের অনেক মিল | তাহলে কি এটা প্যারালাল ইউনিভার্স ? এখানকার মানুষেরা সভ্যতায় এত পিছিয়ে কেন ? নাহ, এটা প্যারালাল এইনিভার্স হতে পারেনা | ভাবলেন ক্যাপ্টেন | তাহলে…..? চট করে ব্যাপারটা মনে হলো ক্যাপ্টেনের | ওয়ার্মহোলে প্রবেশ করে সময় পরিভ্রমণ করা যায় | তাহলে এমনও তো হতে পারে, ডার্ক হোলে প্রবেশ করে তিনি সময় পরিভ্রমণ করেছেন | এসে পড়েছেন হাজার হাজার বছর পূর্বের সময়ে, একেবারে আদিম যুগে | 
শেষ কথা: ছেলেটার নাম তাশান | বয়স আট বছর | প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সময় ব্রোঞ্জের মূর্তিটার দিকে ফিরে ফিরে তাকায় সে | মূর্তীটার সাথে তার নিজের চেহারার মিল আছে বলে মনে করে সে | কেন যেন তার মনে হয় মূর্তিটা তারই | এই লোকটা নাকি আদিম কালে মানুষের সভ্যতার উন্মেষ ঘটিয়েছিল|তারই মূর্তি এটা |
………সমাপ্ত………

COMMENTS

নাম

অনলাইনে আয়,1,ইতিহাস,11,উপন্যাস,1,এক্সক্লুসিভ খবর,14,এলিয়েন রহস্য,3,কবিতা,3,কৌতুহলী,12,খাবার,19,গল্প,1,গুরুত্বপূর্ণ স্থান,2,ছবি,15,জীবনযাপন,16,জীবনী,12,টিপস অ্যান্ড ট্রিকস,11,পিডিএফ,3,প্রযুক্তি আলো,20,ফ্রিল্যান্সিং,8,বই,3,বিজ্ঞান,13,বিলভ ইট অর নট,12,বৃক্ষ,1,ভিডিও,4,ভেষজ,1,ভ্রমন,1,রহস্য,12,লাইফ টিপস,16,লেখাপড়া,4,সন্ধানী আলো,31,সাইন্স ফিকশন,1,সাধারণ জ্ঞান,9,সাপ্তাহিক সেরা পোস্ট,9,সাহিত্য,7,সেরা পোস্ট,8,স্বাস্থ্য কথা,36,স্মৃতি,11,Believe it or not,10,Curiosity,11,eBook,3,Education,4,Exclusive news,13,Freelancing,8,General knowledge,9,Health tips,35,History,10,Lifestyle,16,Light ferret,29,Literature,7,Mystery,11,Picture,15,Science,11,Technology,20,Tips & tricks,11,Top of the week,9,Video,4,
ltr
item
আলোর সন্ধানী : সাইন্স ফিকশন: অতীত
সাইন্স ফিকশন: অতীত
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjGT1t5wuOkQlOB-hJwOiQfy2Qb7w6F8Wc-EQRX0RsjPjxXEYYQopWngB01f3L9JC_GPVLlkw5M9MD3BUEJ85mh319xszb9PueLtlXSaAS9RhA0NQ0TJDoV5KpPOexaXEUIZaL1r0Xqla4/s320/electric-brain-520x245.jpg
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjGT1t5wuOkQlOB-hJwOiQfy2Qb7w6F8Wc-EQRX0RsjPjxXEYYQopWngB01f3L9JC_GPVLlkw5M9MD3BUEJ85mh319xszb9PueLtlXSaAS9RhA0NQ0TJDoV5KpPOexaXEUIZaL1r0Xqla4/s72-c/electric-brain-520x245.jpg
আলোর সন্ধানী
http://alorsondhani.blogspot.com/2016/04/blog-post_35.html
http://alorsondhani.blogspot.com/
http://alorsondhani.blogspot.com/
http://alorsondhani.blogspot.com/2016/04/blog-post_35.html
true
3238174760204916817
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS CONTENT IS PREMIUM Please share to unlock Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy