– মামুন হাসান এক এক কন্ট্রোল প্যানেলের সামনে গম্ভীরভাবে বসে আছেন ক্যাপ্টেন তাশান | চিন্তার ভাজ পড়ে আছে তার কপালে |শীতাতল নিয়ন্ত্রি...
– মামুন হাসান
এক
এক কন্ট্রোল প্যানেলের সামনে গম্ভীরভাবে বসে আছেন ক্যাপ্টেন তাশান | চিন্তার ভাজ পড়ে আছে তার কপালে |শীতাতল নিয়ন্ত্রিত কক্ষে থাকার পরও তার নাকের ডগায় ও কপালে জমে আছে বিন্দু বিন্দু ঘাম | ভাবনার গভীরে ডুবে আছেন তিনি | মাথা কাজ করছেনা তার | অদ্ভুত কিছু | ঘটনা ভাবিয়ে তুলছে তাকে | ভাবনার কোন কূল কিনারা করতে পারছেন না তিনি | নিজের মস্তিষ্ক যেন প্রতারণা করছে তার সাথে | একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন তিনি মনিটরের দিকে |সেখানে তার নভোযানের গতিবিধির বিবরণ দেয়া আছে কিছু সাংকেতিক ভাষায় | নভোযানটি নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি | কোন কিছুই ঠিকমত হচ্ছেনা | যেন অন্য কেউ এর নিয়ন্ত্রণ করছে | মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের সাথে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করতে গিয়ে ব্যার্থ হয়েছেন | তার চিন্তাভাবনার মূলে এখন একটাই বিষয়-নভোযানটিকে নিয়ন্ত্রণে এনে একে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা | সেই দিকে লক্ষ রেখেই প্রাণপনে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি | দলের অন্যসব সদস্যদের সহযোগীতা থাকলে কাজটা বেশ সহজ হতো | মনে মনে ভাবলেন ক্যাপ্টেন | একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি | তা আর সম্ভব নয় | দলের সবাই তার বিরোধীতা করছে | নিরাপত্তার খাতিরে তাদের সবাইকে আলাদা একটা কক্ষে আটকে রেখেছেন তিনি | একঝাক মেধাবী লোকগুলো এখন আর কোন কাজেই আসবেনা তার | অবশ্য এছাড়া অন্য কোন উপায় ও ছিলনা | তিনি এই মিশনের ক্যাপ্টেন | মহাকাশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ এবং দক্ষ একজন লোক তিনি | যে কোন বিষয়ে তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত | অধীনস্ত কেউ বিদ্রোহী হয়ে উঠলে প্রয়োজনে তাকে খুন করে ফেলার অনুমতিও ক্যাপ্টেনকে দিয়েছে মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র | তিনি খুন খারাবির মধ্যে যান নি | শুধুমাত্র আটকে রেখেছেন |
দুই
কয়েকটা বোতাম স্পর্শ করতেই মনিটরে একটা দৃশ্য ভেসে উঠল | বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে তারা | সবার চেহারায় এক ধরনের হতাশার ছায়া দেখতে পেলেন ক্যাপ্টেন | রাইয়ান নামের অল্পবয়েসী ছেলেটা যে নেতৃত্ব দিয়েছিল অন্যদের কোয়ার্টজের জানালায় হাত রেখে দাড়িয়ে তাকিয়ে আছে বাইরে | এই অন্ধকার মহাশূন্যের মাঝে কি দেখছে কে জানে | ছেলেটা বেশ সাহসী এবং বুদ্ধিমান | অনেক সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে এর মাঝে | মনে মনে ভাবলেন ক্যাপ্টেন | প্রবীণ পদার্থবিজ্ঞানী দুজন-কিম আর তানা উদাস ভঙ্গিতে হাটু গেড়ে বসে আছেন | খুবই কাজের লোক এরা | ক্যাপ্টেনের ধারনা এখনও নিশ্চয়ই পদার্থবিদ্যার কোন সমস্যা নিয়ে ভাবছে তারা | গণীতবিদ বেমুন আর চিকিৎসক ক্লনকে ও দেখা গেল | দেখা গেল নভোযানের ইঞ্জিনিয়ারদের |
“এরা সবাই এখন আমার কাছে সোনার টুকরা | সবাইকেই এখন দরকার, খুবই দরকার |” মনে মনে বললেন ক্যাপ্টেন |
তাদেরকে যে কক্ষে আটকে রাখা হয়েছে সেখানকার দেয়ালে বসানো হলো গ্রাফিক স্ক্রীন অন করলেন ক্যাপ্টেন |মাইক্রোফোন মুখের সামনে এনে কথা বলতে লাগলেন তিনি | “আমার প্রিয় সহকর্মী বন্ধুগন, আমার ইতোপূর্বের ব্যাবহারের জন্য আমি লজ্জিত | সত্যি বলতে আমার আর অন্য কোন উপায় ছিলনা | ‘আপনারা প্রত্যেকেই অত্যন্ত বিচক্ষণ এবং নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পক্কে সচেতন | মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র আমাদের যে দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছে, আমাদের উচিত তা সঠিকভাবে পালন করা | ‘আমি আশা করব আপনারা এখন আর বিরোধীতা করবেন না | আমাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে আমরা পৃথিবীতে ফিরে যাব | ‘সবাই নিদ নিজ দায়িত্ব পালন করে আমাকে সাহায্য করুন |আমাদের নভোযান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে প্রায় | এই মূহুর্তে আপনাদের সহযোগীতা খুবই প্রয়োজন | দয়া করে সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হোন | আপনারা রাজী হলে আমি এক্ষুনি সবাইকে মুক্ত করে দিব| ” “চুপ কর বুড়ো ভাম | সরোষে বলল রাইয়ান | রাগে মুখ শক্ত হয়ে গেছে তার | “এখন রাগ করার সময় নয় রাইয়ান | শান্ত হও | আমাদের এখন বিপদ | যেকোন মূহুর্তে আমাদের নভোযান বিস্ফোরিত হতে পারে | এখন সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে |”বললেন ক্যাপ্টেন | দাড়ি কামানো মসূণ গালে হাত বুলালেন তিনি | “আমি আগেই ডার্ক হোলে ঢুকতে মানা করেছিলাম | আমাদের সবার কথা উপেক্ষা করে আপনি ডার্কহোলে ঢুকিয়েছেন নভোযানটা | এবার যা করার আপনিই করুন | আমাদের আর কিছুই করার নেই |” বলল রাইয়ান | চোখ পিটপিট করে তাকালেন ক্যাপ্টেন | শান্ত ভঙ্গিতে বললেন, “নভোচারীরা এভাবে কথা বলেনা ছেলে | তারা হয় নির্ভীক|বিপদে তারা কখনো পিছু হটেনা | ‘আমাদের উপর যে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে, তা সঠিকভাবে পালন করাই আমাদের কাজ | ডার্ক হোলের অপর পাশে যেতেই হবে আমাদের |” “এটা তো আমাদের কাজ ছিলনা | একটা সফল মিশন শেষে ফিরে যাচ্ছিলাম আমরা | মাঝপথে হঠাৎ করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা একটা দায়িত্ব দিয়ে বসবেন আর আপনি তা বিনাদ্বিধায় মেনে নিবেন ? আমাদের মতামত নেওয়ার ও কোন প্রয়োজন মনে করলেন না ? ক্রুদ্ধস্বরে কথাগুলো বলল রাইয়ান|রাগে ফুসছে সে | “আপনি পৃথিবীতে ফিরে চলুন | সবরকমের সহযোগীতা পাবেন আমাদের কাছ থেকে | “বললেন পদার্থবিজ্ঞানী কিম | তার কথায় সায় দিল অন্যরা | “ক্যাপ্টেন , আপনার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে আপনার এবং আমাদের সকলের প্রাণ | ‘ডার্ক হোল নিয়ে তেমন কোন গবেষণা হয় নি এখনো |
আমরা কেউ জানিনা কি আছে সে খানে, কি হতে পারে সে সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই কারো | তাই সম্ভাব্য কোন বিপদের মধ্যে ঝাপিয়ে পড়তে পারিনা আমরা | যেহেতু আমরা আমাদের মিশন শেষ করেছি, এখন সময় ফিরে যাওয়ার |নতুন মিশনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত নই কেউ আমরা | ‘একথা আগেও বলেছি আপনাকে | কিন্তু কারো কথায় ভ্রুক্ষেপ করেননি আপনি, নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থেকেছেন | ‘এখনো সময় আছে ক্যাপ্টেন, আপনি মত পাল্টান | নভোযান ঘুরিয়ে নিন পৃথিবীর দিকে | আমরা আপনার পাশে আছি | ” বললেন অপর পদার্থবিজ্ঞানী |
সুইচ টিপে মনিটর বন্ধ করে দিলেন ক্যাপ্টেন | এদের সাথে কথা বলে কোন লাভ নেই | অযথা সময় নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই হবেনা | এদেরকে না এনে কতকগুলো রোবট নিয়ে এলেই বোধহয় ভাল হত | রাগে ফোসফোস করতে লাগলেন ক্যাপ্টেন | দুইহাতে নিজের চুলের মুঠি ধরে ঝাকালেন তিনি | সজোরে কিল মারলেন কালো গ্রানাইটের টেবিলটার ওপর | মেজাজ বিগড়ে গেছে তার |
তিন
এইমাত্র ঘুম ভাঙল ক্যাপ্টেন তাশানের | কাজ করতে করতে কন্ট্রোল রুমেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন যেন কখন | নিজের কক্ষে যাবারও অবকাশ পাননি |
প্রাকৃতিক কাজ সেরে গোসল করে এলেন ক্যাপ্টেন | তাক থেকে কাপড় নামিয়ে দ্রুত পরিধান করে নিলেন | প্রতিদিনকার অভ্যাসমতো আয়নার সামনে দাড়িয়ে মাথা আচঁড়াতে গিয়ে থমকে দাড়ালেন তিনি | এখন অতকিছুর সময় নেই | হাতে অনেক কাজ তার | হাত দিয়ে এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করতে করতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন | ফুড স্টোরে গিয়ে ঝটপট করে নাস্তার পাট চুকিয়ে এক মগ গরম কফি পান করে শরীরটা চাঙ্গা করে নিলেন | তারপর কন্ট্রোলরুমে এসে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসলেন | মনিটরের দিকে তাকাতেই ভ্রূ কুচকে গেল তার|নভোযানের বর্তম্ন গতিবেগ আলোর বেগের চেয়েও বেশী | “এটা কিভাবে সম্ভব ?” নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলেন যেন | মাথা তালগোল পাকিয়ে গেল তার | ভুল দেখছেন না তো ? ভাবলেন তিনি | আবার খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলেন মনিটরের পর্দায় ভেসে থাকা তথ্যগুলো | নিশ্চিত হতে পারলেন যে, তিনি ভুল কিছু দেখেননি | নানান প্রশ্ন উকি দিল তার মাথায় | গতি বাড়ল কিভাবে ? বাড়ালই বা কে ? আর এমন অবিশ্বাস্য পরিমাণ গতি কিভাবে সম্ভব ? কোন মহাজাগতিক প্রাণীর কাজ নয় তো ? নাকি কোন গ্রহের শক্তিশালী মহাকর্ষীয় বলের প্রভাব ? ভেবে পেলেন না তিনি কিছু | মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেন ক্যাপ্টেন | কোন লাভ হলোনা তাতে | বহুকষ্টে মাথা ঠান্ডা রাখলেন তিনি | এইসময় উত্তেজিত হলে চলবেনা | নভোযানের গতি কমাতে শুরু করলেন ক্যাপ্টেন | কমাতে কমাতে একসময় শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনলেন গতি | তারপরও নভোযান ছুটে চলছে দুরন্ত গতিতে | কোন এক শক্তিশালী আকর্ষনের প্রভাবে ছুটে যাচ্ছে অজানা গন্তব্যে | মনিটরে দেখা যাচ্ছে আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ভেসে আছে ছোট বড় অসংখ্য পাথরখন্ড|কোন এক মহাজাগতিক বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে যাওয়া কোন গ্রহের অংশবিশেষ হবে হয়তো | এমন সময় মনিটরে ছোটখাট একটা গ্রহাণু দেখা গেল | একদম নভোযানের সোজাসুজি | চোখের পলক ফেলার আগেই সংঘর্ষ হলো ওটার সাথে | নভেযানের সামনের বেশ কিছু অংশ-কন্ট্রোলরুমের অর্ধেক পর্যন্ত ভেঙ্গে উড়ে গিয়ে হারিয়ে গেল কোথাও | বাকী অংশ খাড়া নিচের দিকে নামতে লাগল | চেয়ার থেকে ছিটকে গিয়ে পেছনে দেয়ালের সাথে সজোরে ধাক্কা খেলেন ক্যাপ্টেন | বায়ুয উর্ধমুখী চাপের প্রভাবে দেয়ালের সাথে সেঁটে রইলেন তিনি | চোখ মেলতে পারছেন না তিনি বাতাসের তীব্র ধাক্কার কারণে | জীবনের প্রথম মৃত্যুর কথা স্মরণ করলেন তিনি | এবং প্রস্তুত হয়ে রইলেন মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্য | অল্পসময়ের মধ্যে অনেক ধরনের ভাবনা খেলা করল তার মাথায় | চোখে ভেসে উঠল অনেক দৃশ্য | মানুষের জীবন কত অদ্ভুত ! ভাবলেন ক্যাপ্টেন | স্বল্প সময়ের ন্য পৃথিবীতে আসা, কিছুদিন বসবাস করা ।
তারপর আবার চলে যাওয়া | আচ্ছা মানুষ পৃথিবীতে আসে কোত্থেকে ? আর যায়ই বা কোথায় ? আগে তো কখনো ভেবে দেখেননি তিনি | জীবনের পঞ্চান্নটা বছর কাটিয়ে দিয়েছেন তিনি | কতশত পড়াশোনা, কত গবেষণা করলেন, কত নতুন নতুন গ্রহ আবিষ্কার করলেন অথচ এই ব্যাপারটা ভেবে দেখেননি কোনদিন | ভাবতেই হাসি পেল তার |
চোখ বন্ধ করে আছেন ক্যাপ্টেন | আশেপাশে কি হচ্ছে, কি আছে তা দেখার কৌতুহল অনুভব করলেন তিনি | চোখ মেলে তাকাবেন কিনা ভাবছেন | সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না এখনো | দটানায় ভুগছেন | অবশেষে চোখ খুললেন তিনি | নীচে একটা গ্রহ দেখতে পেলেন | নীল গ্রহ | দেখতে অনেকটা পৃথিবীর মত লাগছে | আগে, যুবক বয়সে , প্রথম প্রথম যখন তিনি নভোচারী হয়ে মহাকাশভ্রমণে যেতেন তখন অত্যন্ত কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে থাকতেন পৃথিবীর দিকে | ঐ সময় মহাকাশ থেকে যেমন দেখাত পৃথিবীকে, ঠিক তেমনটাই দেখাচ্ছে এখন | বাতাসের দমক অনেকটা কমে এলেও বেশীক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলেন না ক্যাপ্টেন | চোখ বুজে ফেললেন আবার | অচেনা এই গ্রহ নিয়ে ভাবতে লাগলেন ক্যাপ্টেন | কেমন হবে এই গ্রহ ? এট কি প্রাণ ধারনের উপযুক্ত হবে ? এখানে কি পানি আছে ? অক্সিজেন আছে বায়ুতে ? কোন মহাজাগতিক প্রাণী আছে কি এই গ্রহে ? যদি থাকে, কেমন হবে তারা ? বুদ্ধিমান নাকি নির্বোধ ? শান্তিপ্রিয় নাকি নৃশংস ও ভয়ংকর ? কেমন হবে ? কেমন ? কেমন হতে পারে ? কেমন হওয়া উচিত ? ক্যাপ্টেন জানেন না কিছু | গ্রহটাতে কি নামতে পারবেন ? ভাবলেন তিনি | যখন নিচে নামবেন , বিশাল এই নভযানের নিচে চাপা পড়ে চ্যাপ্টা হয়ে যেতে হবে তাকে | “আরে আশ্চর্য ব্যাপার ! আমি নিঃশ্বাস নিচ্ছি কিভাবে ! এখানে কি অক্সিজেন আছে নাকি !” বিস্ময়ের চূড়ান্তে পৌছলেন ক্যাপ্টেন | অবাক হয়ে তিনি লক্ষ করলেন খুব স্বাচ্ছন্দে তিনি শ্বাস নিতে পারছেন | মহাকাশে যা অস্বাভাবিক এবং রীতিমত অসম্ভব ব্যাপার | অনেক ভেবেও তিনি বুঝতে পারলেন না কি এর কারন |
চার
পড়ন্ত বিকেল | এই সময়টায় সাধারনত কোন কাজ থাকেনা | আর কাজ না থাকলে ঘুমিয়ে থাকে তারা সবাই | বরাবরের মতো আজও তারা ঘুমিয়ে আছে সবাই | হঠাৎ বিকট এক শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল তাদের | অল্পতেই ভয় পায় তারা | উত্তেজিত হয়ে ওঠে | এবারও তার ব্যতিক্রম হলোনা | আতঙ্কগ্রস্ত হলে সবাই | উত্তেজিত হয়ে গুহা থেকে বের হয়ে এল তারা একে একে | ব্যাপক হৈ চৈ শুরু করে দিল | ওপর থেকে বিশালকায় কিছু একটা নেমে আসছে | জিনিসটার সাথে পরিচিত নয় তারা | যেদিক দিয়ে নামছে ওটা, দৌড়ে সেদিকে যেতে লাগল সবাই | চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট, মনে কৌতুহল |
বুদ্ধিমান নাকি নির্বোধ ? শান্তিপ্রিয় নাকি নৃশংস ও ভয়ংকর ? কেমন হবে ? কেমন ? কেমন হতে পারে ? কেমন হওয়া উচিত ? ক্যাপ্টেন জানেন না কিছু | গ্রহটাতে কি নামতে পারবেন ? ভাবলেন তিনি | যখন নিচে নামবেন , বিশাল এই নভযানের নিচে চাপা পড়ে চ্যাপ্টা হয়ে যেতে হবে তাকে | “আরে আশ্চর্য ব্যাপার ! আমি নিঃশ্বাস নিচ্ছি কিভাবে ! এখানে কি অক্সিজেন আছে নাকি !” বিস্ময়ের চূড়ান্তে পৌছলেন ক্যাপ্টেন | অবাক হয়ে তিনি লক্ষ করলেন খুব স্বাচ্ছন্দে তিনি শ্বাস নিতে পারছেন | মহাকাশে যা অস্বাভাবিক এবং রীতিমত অসম্ভব ব্যাপার | অনেক ভেবেও তিনি বুঝতে পারলেন না কি এর কারন |
চার পড়ন্ত বিকেল | এই সময়টায় সাধারনত কোন কাজ থাকেনা | আর কাজ না থাকলে ঘুমিয়ে থাকে তারা সবাই | বরাবরের মতো আজও তারা ঘুমিয়ে আছে সবাই | হঠাৎ বিকট এক শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল তাদের | অল্পতেই ভয় পায় তারা | উত্তেজিত হয়ে ওঠে | এবারও তার ব্যতিক্রম হলোনা | আতঙ্কগ্রস্ত হলে সবাই | উত্তেজিত হয়ে গুহা থেকে বের হয়ে এল তারা একে একে | ব্যাপক হৈ চৈ শুরু করে দিল | ওপর থেকে বিশালকায় কিছু একটা নেমে আসছে | জিনিসটার সাথে পরিচিত নয় তারা | যেদিক দিয়ে নামছে ওটা , দৌড়ে সেদিকে যেতে লাগল সবাই | চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট , মনে কৌতুহল |
পাঁচ
নভোযানটি পতিত হলো একটা হ্রদের ওপর | ওপর থেকে ধেয়ে আসছিল ওটা | হঠাৎ একসময় শীতল পানির স্পর্শ পেলেন ক্যাপ্টেন | সাথে সাথে তার মনে হলো পিঠের ওপর যেন আস্ত একটা পাহাড় ধ্বসে পড়েছে | বায়ুর চাপের কারনে এতক্ষণ নভেযানের ভর অনুভব করেননি তিনি | পানিতে পড়ার পরপরই বায়ুর চাপ সরে যায় এবং সমস্ত ভর গিয়ে পড়ে ক্যাপ্টেনের ওপর | এক ধাক্কায় একেবারে হ্রদের তলদেশে চলে গেলেন ক্যাপ্টেন | তার পেছন পেছন ধেয়ে আসছে নভোযানের খন্ডিত অংশটি | পুরো হ্রদের পানি আন্দোলিত হচ্ছে | এক্ষুণই তার ওপর এসে পড়বে দৈত্যাকার বস্তুটি | পিষে একদম পানির নিচের কাঁদাপানির সাথে মিশিয়ে ফেলবে তাকে | দম বন্ধ হয়ে আসতে চাইল ক্যাপ্টেনের | সাতঁরে সরে যাওয়ার সময়টুকুও নেই তার হাতে | চোখ বন্ধ করে মৃত্যুর ক্ষণ গুনকে শুরু করলেন তিনি | কয়েক সেকেন্ট কেটে গেল |ঘটলোনা কিছুই | চোখ মেলে উপরে তাকালেন তিনি পানিতে ভাসতে ভাসতে | যা ভেবেছেন তা হয়নি | নভোযানটি খাড়া নিচের দিকে নামছে না | কাত হয়ে গেছে ওটা | আস্তে আস্তে ভেসে ভেসে নিচে নামছে | খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলেন ক্যাপ্টেন | নতুন করে জীবন ফিরে পেয়েছেন যেন | সাতঁরে সরে গেলেন ওটার নিচ বরাবর অবস্থান থেকে | তারপর উঠে এলেন ওপরে |
হ্রদের তীড়ে উঠেই ক্যাপ্টেনের চক্ষুচড়ক গাছ | শতশত লোক দাড়িয়ে আছে তার সামনে | কাপড় বলতে কিছু নেই তাদের শরীরে , সম্পূর্ন নগ্ন | অবাক বিষ্ময়ে চেয়ে আছে তার দিকে | ঐ লোকগুলো তাকে দেখে যতটা না অবাক হয়েছে, তার চেয়ে বেশী অবাক হয়েছেন ক্যাপ্টেন নিজে | কোথায় এসেছেন তিনি ? কোন গ্রহে ? এখানে মানুষ এল কোত্থেকে ? আর তাদের এই অবস্থা কেন ? পৃথিবীর সাথে এই গ্রহের অনেক মিল | তাহলে কি এটা প্যারালাল ইউনিভার্স ? এখানকার মানুষেরা সভ্যতায় এত পিছিয়ে কেন ? নাহ, এটা প্যারালাল এইনিভার্স হতে পারেনা | ভাবলেন ক্যাপ্টেন | তাহলে…..? চট করে ব্যাপারটা মনে হলো ক্যাপ্টেনের | ওয়ার্মহোলে প্রবেশ করে সময় পরিভ্রমণ করা যায় | তাহলে এমনও তো হতে পারে, ডার্ক হোলে প্রবেশ করে তিনি সময় পরিভ্রমণ করেছেন | এসে পড়েছেন হাজার হাজার বছর পূর্বের সময়ে, একেবারে আদিম যুগে |
শেষ কথা: ছেলেটার নাম তাশান | বয়স আট বছর | প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সময় ব্রোঞ্জের মূর্তিটার দিকে ফিরে ফিরে তাকায় সে | মূর্তীটার সাথে তার নিজের চেহারার মিল আছে বলে মনে করে সে | কেন যেন তার মনে হয় মূর্তিটা তারই | এই লোকটা নাকি আদিম কালে মানুষের সভ্যতার উন্মেষ ঘটিয়েছিল|তারই মূর্তি এটা |
………সমাপ্ত………
COMMENTS