হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে, সিংহল-সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয়-সাগরে অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার-অশোকের ধূসর ...
হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল-সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয়-সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার-অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরও দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দু-দন্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরেরবনলতা সেন ।
চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের পর
হাল ভেঙ্গে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।
সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মত
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পান্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে – সব নদী – ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন
★★★
→‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো লেখা ১৩৩২ থেকে ১৩৪৬ বঙ্গাব্দের মাঝে এবং প্রথম প্রকাশিত হয় ইংরেজি ডিসেম্বর ১৯৪২, বাংলা ১৩৪৯ সালে; কবিতা-ভবন প্রকাশিত ‘এক পয়সায় একটি’ গ্রন্থমালার অন্তর্ভুক্ত হিসেবে। প্রকাশক জীবনানন্দ দাশ নিজেই। কাগজের মলাটে ১৬ পৃষ্ঠার প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদ করেছিলেন শম্ভু সাহা। এই সংস্করণে কবিতা ছিল মোট ১২ টি। এই কাব্যগ্রন্থে সংকলিত ‘বনলতা সেন’ শীর্ষক কবিতাটি ইংরেজি ১৯৪৪ সালে পূর্বাশা লিমিটেড থেকে সত্যপ্রসন্ন দত্ত প্রকাশিত ‘মহাপৃথিবী’ কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করেন জীবনানন্দ দাশ। পরবর্তিতে, জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুর দুই বছর আগে, ইংরেজি ১৯৫২ সালে [বাংলা শ্রাবণ ১৩৫৯] কলকাতার সিগনেট প্রেস থেকে বোর্ড বাঁধাইয়ে ৪৯ পৃষ্ঠায় বর্ধিত আকারে প্রকাশিত হয় ‘বনলতা সেন’। সিগনেট সংস্করণের প্রচ্ছদ করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। মূল্য দুই টাকা। কবির জীবিতকালে এটিই ‘বনলতা সেন’-এর সর্বশেষ সংস্করণ। প্রকাশক ছিলেন দিলীপকুমার গুপ্ত। এই সংস্করণে আগের সংস্করণ থেকে বেশি আরো ১৮টি কবিতাসহ মোট ৩০টি কবিতা অন্তর্ভুক্ত হয়, এর মধ্যে ‘বনলতা সেন’ শীর্ষক কবিতাটিও আবার স্থান পায়।
COMMENTS