তার নাম T2।নামটা একসময় বাংলাতেই ছিল।কিন্তু হুট করেই টিটু থেকে টি,টিটকারি ঘুরে T2 তে এসে ঠেকে।নাম নিয়ে তার আপত্তি নেই।তার আপত্তি আছে জীবন...
তার নাম T2।নামটা একসময় বাংলাতেই ছিল।কিন্তু হুট করেই টিটু থেকে টি,টিটকারি ঘুরে T2 তে এসে ঠেকে।নাম নিয়ে তার আপত্তি নেই।তার আপত্তি আছে জীবন নিয়ে।এই জীবন তাকে কিছু দেয়নি।শুধু এসএসসিতে অংকে এ প্লাস পেয়েছিল।তাও ৭৬ আন্সার করে এ প্লাস।জীবন তাকে একবারই ৪ নাম্বার উপহার দেয়।
তবু T2 সব মেনে নিয়েছে।লোকের মুখে বলা ভালো একটি মেয়েকে সে বউ হিসেবেও মেনে নিয়েছে।কিন্তু সকাল থেকেই বউ কে পাওয়া যাচ্ছেনা।ঘুম থেকে উঠে চোখ খুলতেই বউ বউ বলে চিৎকার দিচ্ছে T2।বউকে না পেয়ে সে আরও জোরে চিৎকার দিচ্ছে।বউ…ও বউ বউ গো…
ঠিক তখনি হুমড়ি খেয়ে বাসায় ৪/৫ জন মানুষ ঢুকে পরে।
– T2 ভাই আপনি বাচা আছেন?আপনি মরেন নাই?
-বউ গেছে কিছুক্ষন।এখনই মরবো কেন? আমি বউ পাগল না।আমার বউ জামাই পাগলী।
-ভাই ভূমিকম্প হইছে।বিশাল ভুমকিম্প।যদিও কেও মরে নাই।তবে আমার ধারনা ছিল একজন লোক মরলেও সেটা আপনি মরবেন।ভাবী কই?
-আছে।আপনারা যান।আমি দরজা বন্ধ করে একা একা চিপস খাবো।আপনারা যান।
সবাইকে ঘর থেকে বের করে T2 চিন্তায় পরে গেলো।ভূমিকম্পে বউ আমাকে ফেলেই চলে গেলো?বউ এটা পারল?কালকে রাতেও বউ আমাকে বলেছে কেয়ামত ও আমাদের আলাদা করতে পারবেনা।তবে এই ভূমিকম্প কি কেয়ামত থেকেও ভয়াবহ?
ভাবতে ভাবতেই বউ এর ফোন এলো।ফোন ধরে যদি শুনতে পাই “জান আমি খাটের নিচে শুয়ে আছি” তবু একটু শান্তি পেতাম।
-তুমি কই?
-জান আমি ভয় পেয়ে এক দৌড়ে আমাদের বাসায় চলে আসছি।তুমি তো জানো না সকালে কি ভূমিকম্প হইছে।আব্বা বলছিল তোমাকে একটা ফোন দিতে।তবে আমি তো জানি তুমি ঘুমে তাই তখন আর দেইনি।
ফোন রেখে দিয়ে সিগারেট ধরায় T2।সিগারেটের উড়ন্ত ধোঁয়া দেখে মনে হচ্ছে কোথাও থেকে উড়াল দিয়ে আসি।কি পেলাম বিয়ে করে?পলাতক বউ?জীবন তার কাছে আরও কঠিন মনে হচ্ছে।সে তার এক মাত্র সফলতা গনিতের এ প্লাসও ভুলে যাচ্ছে।এত নিষ্ঠুর স্বার্থপর মানুষ হতে পারে?তবে কি আমার দোস্ত ফারুক ঠিক ই বলতো যে “স্বার্থপরদের আমি মেয়ে বলে গালি দেই”?
কান দিয়ে তার গরম বাতাস বের হচ্ছে। T2 একটু পর পর হাহাহা করছে।হাহা করলে তার হাসি আসে।কিন্তু আজকে আর আসছেনা।উপরে আল্লাহ্ আর নিচে বউ এই দুই ছিল তার সম্বল।কিন্তু আজ…
দ্বিতীয় প্রেমিকাকে এখন খুব মনে পড়ছে।ও একটু আলাদা ছিল।ও অন্য সব মেয়েদের মত ছিল না।না, তার শারীরিক গঠন ছেলেদের মত না,মেয়েদের মতই ছিল।কিন্তু সে আলাদা ছিল।যদিও T2 নাম ডাকার পাশাপাশি সে আমাকে কদম গাছ আর ছোট মুরগী বলেও ডাকতো।
কেন যে মেয়েটাকে বিয়ে করলাম না।তাকে কি একটা ফোন দিবো?”ফিরে আস তুমি” লিখে ম্যাসেজ দিবো?নাকি মোবাইলে ওয়েলকাম টিউন সেট করে দিবো যদি মন কাঁদে তুমি চলে আস?
যদি বলে না আমার তো মন কাঁদে না।তখন?মন অন্য কোথাও হাসলে তো আসা যায়না।
বাসে বসে আছি।দূরে যাচ্ছি।বান্দরবান এর দিকে যাচ্ছি একা থাকার জন্য।মনটা ভালো লাগছেনা।বাসে ঘুমিয়ে গেলাম।হুট করে ঘুম থেকে উঠে বাসের পাশের জনের হাত ধরে হাউ মাউ করে বললাম
-“ভূমিকম্প হলে আমাকে ফেলে যাবেন না তো?
-ধুরু শালার পুত।
-তার মানে কি চলে যাবেন?
-ধুরু শালার পুত।
ভদ্রলোক হয়তো একটা কথাই শিখেছেন।কিন্তু তার কথা শুনে মনে সে অবশ্যই আমাকে ফেলে যাবেন।তবে আমি এই লোককে কেন জিজ্ঞেস করছি?
বাস বান্দরবানে থামে।বউ কি আমাকে ফোন করার ট্রাই করছে?আমার ফোন বন্ধ।চোখ থাকিতেও অন্ধ অবস্থায় আমি এক ছোট হোটেলে উঠি।হোটেলের বয় কে বললাম ভালো খাবার কি আছে রাতে?
-ভালো গাঁজা আছে স্যার।
-ভাত মাছ কি আছে?
-স্যার সেই জিনিষ আছে।খাইবেন তো পাহাড়তলী যাইবেন।
-বিয়ে করছ?
-পিরিত করছিলাম।
-তারপর।
-তারপর এই যে সেই রকম গাঁজা বেচি।প্রথম প্রথম খাইতাম এখন বেচি।
রাতে ঘুম চলে আসে।হয়তো ভূমিকম্প না এলে সত্যি ভালোবাসা জানা যেতো না।সত্যির ঠ্যালায় ঘুম আসে ভালো।বিছানায় আমার বন্ধ ফোন পরে আছে।ফোন টা দামি।এক বন্ধু ফোন টা গিফট করে বলছিল এই ৫ ইঞ্চি ফোন দিয়ে গ্রামে এক বিঘা জমি কিনতে পারবি।আমি জমির দাম জানিনা তাই মোবাইলের দামও বের করতে পারবো না।
মামা না চাচা না কাকের কাকা শুনে খুব সকালেই উঠে গেলাম।বিছানায় খসখস শব্দ হচ্ছে।বুঝা যাচ্ছে জানালা দিয়ে কেউ ঢুকতে চাচ্ছে।তবে কি আমার বউ?
ভালোবাসা জানালা দিয়ে যেভাবে ঢুকে সেভাবেই আমার বউ আসছে?আমি তাকে মাফ করে দিবো?
এসব ভাবতেই হুট করে উঠে যাই।আমি উঠতেই দেখি জানালা থেকে একজন ছিটকে পরে গেলো।
আমার বউ নিচে পরে গেলো বলে আমি চিৎকার করছি।কিন্তু ততক্ষণে হোটেলের কয়েকজন আমার রুমে চলে এলো।
-ঐ মিয়া ঐ?
-আবারও ভূমিকম্প?
-আপনি কি খুন করতে আসছেন?
-না মন ভালো করতে আসছি।
-খুন করলে কি মন ভালো থাকে আপনার?
নিচে নামলাম তাদের সাথে।পরিস্থিতি ভালো লাগছেনা।হয়তো আমি আরেকটা বিপদে পড়তে যাচ্ছি।তবে এই বিপদ যদি আমার বউ কে ভুলিয়ে দেয় তবে খারাপ লাগবেনা।হোটেলের নিচে যেতেই দেখি ১৮ বছরের এক জোয়ান ছেলে আহত অবস্থায় পরে আছে আর আমার দিকে আঙ্গুল তাক করে সবাইকে দেখাচ্ছে।
-এই ব্যাডা ডা।এই হালার পুত টা।
-কি হইছে?
-তুই ঘুম থেকে উঠলি কেন?
“এখন যৌবন যার মোবাইল চুরি করার শ্রেষ্ঠ সময় তার” বানীটি মাথায় নিয়ে সে আমার হোটেল রুমের জানালা দিয়ে মোবাইল চুরি করতে ঢুকেছিল কিন্তু আমি জেগে যাওয়াতে সে পরে যায় নিচে এবং আহত হয়।এখন তাকে আহত করার দায় টা আমাকে দেয়া হচ্ছে।
-আপনি ওরে মারার চেষ্টা করছেন?
-হাহা।
-আপনি ধাক্কা মারছেন?
-হোহো।
-মজা লাগতেছে আপনার?
-অবশ্যই।অনেকদিন পর মন ভরে হাসলাম।
সবাই মিলে আমাকে এখন চেপে ধরে ডাক্তার দেখানোর জন্য টাকা দিতে হবে ১০ হাজার।
-ডাক্তার কি দুবাই এ দেখাবে?
সবাই আমার দিকে রক্ত লাল চোখে তাকায়।এখান থেকে মুক্তির উপায় দেখিনা।বড়সড় বিপদে পরে যাচ্ছি।মোবাইল বন্ধ থেকে চালু করলাম।তাদের কাছে সময় নিলাম।মোবাইল খুলতেই বউ এর ফোন।
-জান তুমি কই?কাল রাতে চোখে শসা দেবার সময় তোমাকে ট্রাই করেও পাইনি।তারপর যখন চুলে অয়েল মেসাজ করছিলাম তখনও তোমাকে পাইনি।
-তোর শশা তেলের দুনিয়ায় আমি আর নাই।
-কিইইইই?
-ফোন রাখ বেয়াদপ।
বলেই ফোন রেখে দিলাম।কথাটা বলে মজা লাগছে।ভাল লাগছে।আনন্দ লাগছে।সরাসরি কথা বলায় এত মজা বাহ।
কিন্তু এই হোটেল থেকে বের হবার উপায় দেখছিনা।একটু পর ১৮ বছরের সেই দুর্দান্ত ছেলেটা আমার রুমে আসে।তার চোখে মুখে রাজনীতিবিদের ছাপ দেখা যাচ্ছে।
-স্যার আমারে ২ হাজার টাকা দিয়ে দেন তাইলে ব্যাপারটা মিটমাট হয়ে যাইব।
-মাত্র দুই হাজার?আমি তো ১০ হাজার দেবার জন্য প্রস্তুত।
-তাইলে দেন।আমার কাছেই দেন আমারেই দেন।
-কি নেশা করো?
-হাতের কাছে যা পাই সব সব।
তার নাম জানলাম “বাবা”।এক ধরনের নেশা খেতে খেতে তার নাম বাবা হয়ে যায়।তাকে বললাম আমাকে হোটেল থেকে বাইরে নেবার ব্যবস্থা করো।টাকা যা লাগে দিবো।পারবানা?
-পারবো না মানে?
বাবা আর আমি পাহাড়ে হাঁটছি।নিজের বাবাকে নিয়ে কখনও না হাঁটলেও আজ এক বাবা পেয়েছি।
-টাকা টা দেন আমি যাইগা।
-বাবা,টাকা যে নাই।
-মিস কথা কইলেন?
-কিন্তু মোবাইল তো আছে।নিবা মোবাইল?
-নিমু।
বুটের ডাল দিয়ে কড়া ভাজা পরোটা খাবার ব্যবস্থা করো তো বাবা।তারপর মোবাইল নিয়ে চলে যেও কেমন?
পাহাড়ের আনাচে কানাচে ছোট এক হোটেলে বুটের ডাল দিয়ে পরোটা খেলাম আমি আর বাবা।
-নাও মোবাইল।
-স্যার সত্যি দিয়া দিবেন?
-হা।তোমাকে তো তাই বললাম।
-এইটার দাম কত স্যার?
-আমাদের গ্রামে এক বিঘা জমি কিনতে পারবা।
-কিন্তু স্যার আমি তো বেচুম ২ হাজার টাকায়।পরে বাবা কিনে হোটেলের নিচে রাতে শুইয়া থাইকা আবার সকালে চুরির ধান্দা করুম।
আহা বাবুর কি জীবন।আমি কি পারবো বাবার মত হতে?বাবা কে বললাম দাও তোমার মোবাইল টা আমার বউকে একটা ফোন দেই। শেষবারের মত।দিবানা?
-অবশ্যই স্যার?
-স্যার ডাকতেছ কেন?
-আপনারে ভদ্রলোক মনে হইতেছে আস্তে আস্তে।
বউকে ফোন দিতে সে কেঁদে দিলো।হাজার বছরের পুরানো সে কান্না।সে নাকি তার ভুল বুঝতে পেরেছে।এমন করা টা নাকি ঠিক হয়নি।তার নাকি মন ভালো ছিল না।আবার ভূমিকম্প হলে সে নাকি অবশ্যই আমাকে ডাক দিবে।আর এভাবে একা দৌড় কেন ঘর থেকেও সে কোথাও যাবেনা।
আহা বউ।এখন জীবন নিয়ে হাসি আসছে।আবার সংসার করতেও ইচ্ছে হচ্ছে।এখন ভালভাবে অভিনয় টা করা যাবে।বউকে আমি বলবো জান তোমাকে ভালবাসবো বলেই জন্মেছিলাম সেও হয়তো এমনই বলবে।কিন্তু ভূমিকম্প এলে আমরা কে কার আগে দৌড়তে পারি সে প্রতিযোগিতায় নেমে যাবো।
-স্যার মোবাইলটা আমি নিমুনা।
-বাবা,আমারে করুনা দেখাইবা না।আমি তোমারে এইটা গিফট দিছি যাও।
মলিন চোখে ছেলেটি মোবাইলে হাতে দাড়িয়ে আছে।সকালে এই মোবাইলটি চুরি করতে পারলে খুব খুশি থাকতো।এখনও সে খুশি।কিন্তু এই খুশিতে ভালোবাসা মেশানো আছে।সে মোবাইল বিক্রি করতে পারবে কিন্তু ভালোবাসা বিক্রি করতে পারবেনা।
COMMENTS