একজন মেধাবী, অনুপ্রাণিত, যুদ্ধ পারদর্শী ও দক্ষ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে সিমনে বলিভার দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোকে বিদেশি শাসন ও শোষণ থেকে মুক্ত ...
একজন মেধাবী, অনুপ্রাণিত, যুদ্ধ পারদর্শী ও দক্ষ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে সিমনে বলিভার দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোকে বিদেশি শাসন ও শোষণ থেকে মুক্ত করেন। প্রায় এক বছর স্বাধীনতা সংগ্রাম চলার পর ভেনিজুয়েলা স্বাধীন হয়। সেটিই ছিল দক্ষিণ আমেরিকার প্রথম স্বাধীন দেশ। পরবর্তীতে বলিভার কলম্বিয়ায় স্প্যানিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। বলিভার এভাবে হয়ে ওঠেন দক্ষিণ আমেরিকার স্বাধীনতা আন্দোলনে সফলতার প্রতীক এবং উৎসাহ ও অনুপ্রেরণার মহানায়ক। দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের মানুষকে প্রায় চারশ’ বছরের ঔপনিবেশিক শাসনের অধীন থেকে মুক্তির পথ দেখান সিমন বলিভার। পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী ও সফল এই নেতার নামেই বলিভিয়ার নামকরণ হয়েছে। তার জš§ ১৭৮৩ সালের ২৪ জুলাই ভেনিজুয়েলার রাজধানী কারাকাসের একটি অভিজাত পরিবারে।একজন মেধাবী, অনুপ্রাণিত, যুদ্ধ পারদর্শী ও দক্ষ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে সিমনে বলিভার দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোকে বিদেশি শাসন ও শোষণ থেকে মুক্ত করেন। তার পূর্বপুরুষরা ছিলেন স্পেনের বংশোদ্ভূত। নয় বছর বয়সে বলিভারের মা-বাবা মারা যান। তিনি পারিবারিক ব্যবস্থাপনায় তখনকার সময়ের সেরা শিক্ষকদের কাছে শিক্ষা লাভ করেন। সিমন রডরিগুয়েজ ছিলেন তার অন্যতম বিখ্যাত একজন শিক্ষক। রডরিগুয়েজ ইউরোপীয় রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি বিশেষ করে দক্ষিণ আমেরিকায় ঔপনিবেশিক শাসনের ইতিহাস ও তাদের স্বাধীনতার বিষয়ে ইতিপূর্বে যে সব আন্দোলন গড়ে উঠেছিল সে বিষয়ে বলিভারকে শিক্ষা দেন। এতে বালক বলিভার দক্ষিণ আমেরিকার মানুষের মুক্তির চেতনায় গভীরভাবে প্রভাবিত হন। ব্রাজিল এবং গায়ানা বাদে দক্ষিণ আমেরিকার সব দেশ ছিল চারশ’ বছরব্যাপী ঔপনিবেশিক শাসনের অধীন। কিশোর বয়সেই বলিভার ফ্রান্স বিপ্লবের ‘যুক্তি ও মুক্ত বুদ্ধিভিত্তিক’ আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। তিনি তখনকার সময়ের বিখ্যাত দার্শনিক জন লকি, রুশো, ভল্টেয়ার এবং মন্টেস্কু দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হন। ফ্রান্স বিপ্লবের মহানায়ক নেপোলিয়ান বোনাপার্টের আদর্শ ও অভিজ্ঞতায় অনুপ্রাণিত হয়ে সিমনে বলিভার অন্যান্য জেনারেলকে সঙ্গে নিয়ে স্পেনের ঔপনিবেশিক শাসকদের মাত্র ১২ বছরের মধ্যে পরাজিত, ক্ষমতাচ্যুত ও বিতাড়িত করেন। একে একে মুক্ত হয় ভেনিজুয়েলা, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, পেরু এবং বলিভিয়া।স্বাধীনতা লাভের পর আমেরিকার আদলে নতুন দেশগুলোকে নিয়ে ‘ফেডারেশন অব গ্র্যান্ড কলম্বিয়া’ গঠন করে তিনি মহাদেশটিকে একটি দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি সদ্য স্বাধীন দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যের অভাবে। তা সত্ত্বেও বিশ্বের সুবিশাল একাংশের কোটি কোটি মানুষকে শোষণ ও বঞ্চনার কবল থেকে মুক্ত করার কারণে তিনি ইতিহাসে ‘মুক্তিদাতা (খরনবৎধঃড়ৎ)’ হিসেবে সম্মানিত হয়ে আছেন। তাকে দক্ষিণ আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন বলা হয়। বলিভারকে উচ্চশিক্ষার জন্য ১৭৯৯ সালে পাঠানো হয় স্পেনের মাদ্রিদে। ভেনিজুয়েলাকে স্পেনের শাসন থেকে মুক্ত করার জন্য ১৮০৬ সালে বিদ্রোহ করেন ফ্রান্সিসকো ডি মিরান্দা। বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়। এখান থেকেই বলিভার অনুপ্রাণিত হন। ফ্রান্সিসকো ডি মিরান্দা স্পেনের উপনিবেশবাদী সরকারের দ্বারা বিতাড়িত হয়ে নির্বাসনে ছিলেন। প্রায় ৫ বছর নির্বাসনে থাকার পর ১৮১০ সালে স্পেনের শাসকদের বিরুদ্ধে নতুন করে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু করেন। তাকে ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। সিমনে বলিভার স্বাধীনতার পক্ষে বিদ্রোহী সেনা দলে যোগ দেন। প্রায় এক বছর স্বাধীনতা সংগ্রাম চলার পর ভেনিজুয়েলা স্বাধীন হয়। সেটিই ছিল দক্ষিণ আমেরিকার প্রথম স্বাধীন দেশ। পরবর্তীতে বলিভার কলম্বিয়ায় স্প্যানিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন।বলিভার এভাবে হয়ে ওঠেন দক্ষিণ আমেরিকার স্বাধীনতা আন্দোলনে সফলতার প্রতীক এবং উৎসাহ ও অনুপ্রেরণার মহানায়ক। ১৮১৩ সালে স্প্যানিশদের পরাজিত করে ভেনিজুয়েলার শতভাগ স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। রাজধানী কারাকাসে সিমন বলিভার যখন প্রবেশ করেন তখন লাখো জনতা তাকে অভ্যর্থনা জানায় এবং তাকে ‘মুক্তিদাতা’ উপাধিতে ভূষিত করে। কলম্বিয়ায় স্পেনের ঔপনিবেশের যবনিকাপতন ঘটে। স্বাধীনতা নিশ্চিত হয় কলম্বিয়ার। ১৮২২ সালে সিমনে বলিভারের নির্দেশে তার সবচেয়ে মেধাবী জেনারেলদের অন্যতম এন্টেনিও জোসে ডি সুক্রে ইকুয়েডর থেকে স্প্যানিশদের পরাজিত করেন। এর মধ্য দিয়ে ইকুয়েডর স্বাধীনতা লাভ করে। এর দু’বছর পর সিমনে বলিভার আর্জেন্টিনার মুক্তিনেতা জোসে ডি সান মার্টিনের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি করেন, যার সেনারা পেরুতে সক্রিয় ছিল। জেনারেল সুক্রে আয়াচ্যচুতে স্প্যানিশদের পরাজিত করেন এবং পরিণতিতে পেরু স্বাধীনতা লাভ করে। চিউদাদ বলিভার নামে বর্তমানে পরিচিত এনগেসতুরায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেসে বলিভারকে ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হয়। বলিভারের নির্দেশে জেনারেল সুক্রে ১৮২৫ সালে দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম-মধ্য অঞ্চল আল্টো পেরু জয় করার জন্য বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন; যা তখনও স্প্যানিশদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। যুদ্ধে জয়লাভ করে সুক্রে বাহিনী। স্বাধীনতা লাভ করা দেশটির নতুন নামকরণ করা হয় সিমনে বলিভারের নামানুসারে বলিভিয়া। এভাবে বলিভারের নেতৃৃত্বে উরুগুয়ে ছাড়া দক্ষিণ আমেরিকার সব দেশ স্বাধীনতা লাভ করে। মাত্র ৪৭ বছর বয়সে মহান নেতা সিমনে বলিভার যক্ষায় আক্রান্ত হয়ে ১৮৩০-এর ১৭ ডিসেম্বর কলম্বিয়ার শান্তা মারতায় মৃত্যুবরণ করেন।
COMMENTS