১৬১২ সালে আরজুমান বানুর সঙ্গে শাহজাহানের বিয়ে হয়। পরে যিনি মুঘল সম্রাজ্য পরিচালনা করেন। সম্রাট শাহজাহান তার ১৪ সন্তানের জননী এবং প্রিয়তম...
১৬১২ সালে আরজুমান বানুর সঙ্গে শাহজাহানের বিয়ে হয়। পরে যিনি মুঘল সম্রাজ্য পরিচালনা করেন। সম্রাট শাহজাহান তার ১৪ সন্তানের জননী এবং প্রিয়তম স্ত্রীর নাম পরিবর্তন করে রাখেন মমতাজ মহল। ১৬২৯ সালে মমতাজের মৃত্যুর পর, স্ত্রীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটি স্থাপত্য নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। যাতে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করে, প্রায় ১ হাজার হাতি ব্যবহার করা হয় এবং সেই স্থাপত্যের নির্মাণকাজ শেষ হতে প্রায় ২০ বছর সময় লাগে। তাজমহলের নির্মাণকাজ শেষ হতে না হতেই শাহজাহান তার পুত্র আওরঙ্গজেব দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত ও আগ্রার কেল্লায় গৃহবন্দি হন। শেষ বয়সে সাম্রাজ্য হারিয়ে বন্দি জীবন কাটান। তাই সেই অনিন্দ্য সুন্দর কালো মার্বেল পাথরের সৌন্দর্য তিনি সম্পূর্ণ দেখে যেতে পারেননি। যমুনা তীরে যেখানে ‘তাজমহল’ গড়ে উঠেছিল, শেষ জীবনে শাহজাহান ওখানে একাকী সময় পার করেছেন। মৃত্যুর পর তাকে সেখানে সমাহিত করা হয়।
রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট
রোমিও এবং জুলিয়েটের প্রেমের আখ্যান দুনিয়ার অন্যতম বিখ্যাত প্রেমকাহিনী। যেন ভালোবাসার অপর নাম রোমিও-জুলিয়েট। বিশ্ব বিখ্যাত ইংরেজ লেখক উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের কালজয়ী ট্র্যাজেডি হলো রোমিও-জুলিয়েট। সারা বিশ্বে যুগ যুগ ধরে পাঠকের হƒদয় ছুঁয়ে গেছে এ বিয়োগান্ত প্রেমকাহিনী। রোমিও আর জুলিয়েটের পরিবারের মধ্যে শত্রুতার সম্পর্ক ছিল। দুটি ভিন্ন পরিবারের পূর্ববর্তী রেষারেষি, বংশীয় অহঙ্কার ভেদ করে দু’জন তরুণ-তরুণী প্রথম দর্শনে প্রেমে পড়ে যায়। পরবর্তীতে পরিবারের শত বাধা উপেক্ষা করে নানা নাটকীয়তার মাঝে তারা বিয়ে করে। সবশেষে, দুই পরিবারের শত্রুতার জেরে এবং ভুল বোঝাবুঝির কারণে বিষপানে আত্মহত্যা করে এই প্রেমিক যুগল। তাই পৃথিবীতে যখনই প্রেমের জন্য ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা বলা হয়, সবার আগেই উঠে আসে এই তরুণ যুগলের নাম!
প্যারিস এবং হেলেন
ফিকশনের অপূর্ব এক সংমিশ্রণ হলো, লেখক কালজয়ী হোমারের জগদ্বিখ্যাত এপিক ‘ইলিয়াড।’ নাম করা সেই যুদ্ধের নাম হলো, ট্রোজান ওয়ার যে যুদ্ধে ধ্বংস হয়েছিল পুরো একটা শহর ট্রয়! ইতিহাসে যা হেলেন অব ট্রয় নামে বিখ্যাত। দেবরাজ জিউস এবং স্পার্টার রাজা টিন্ডারিউসের পতœী লিডার মিলনের ফলে শ্রেষ্ঠ সুন্দরী হেলেনের জš§ হয়। বিশ্বসাহিত্যে হেলেন সেরা সুন্দরীর আসনে অধিষ্ঠিত। স্পার্টার রাজা মেনিলাসের সঙ্গে হেলেনের বিয়ে হয়। ট্রয়ের ছোট রাজকুমার প্যারিস হেলেনের প্রেমে পাগল হয়ে অপহরণ করে তার রাজ্যে নিয়ে এসেছিলেন। হেলেনকে উদ্ধারে মেনিলাসের ভাই অ্যাগামেমননের নেতৃত্বে বিরাট গ্রিক সেনাদল ট্রয়ের অভিমুখে যাত্রা করে। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে চলে এই ঐতিহাসিক যুদ্ধ। যুদ্ধের এক পর্যায়ে গ্রিক সৈন্যরা ট্রয় রাজ্যে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তের মধ্যে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে ট্রয়নগর। আগুনে পুড়ে হাজার হাজার সৈন্য আর নিরীহ নাগরিক মারা যায়। গ্রীক বীর একিলিসও হেলেনের অন্যতম পাণিপ্রার্থী ছিলেন। তাই একিলিস ছুটে যায় হেলেনকে বাঁচানোর আশায়; কিন্তু প্যারিস তীর বিদ্ধ করে মেরে ফেলে একিলিসকে। পালিয়ে যায় হেলেন, জয়লাভ করে গ্রিকরা। কিন্তু যে হেলেনের জন্য এতকিছু তাকে মেনেলাউস কাছে পেয়েছিল কিনা তা আজো অজানা।
ত্রিস্তান অ্যান্ড ইসলদে
এটি মধ্যযুগে রাজা আর্থারের রাজত্বকালের ঘটনা। ইসলদে ছিলেন আয়ারল্যান্ডের রাজকন্যা। ছিলেন কর্নওয়েলের রাজা মার্কের বাগদত্তা। তিনি রাজকুমারী অ্যাইসোলেইডকে নিজ রাজ্য কর্নওয়েলে ফিরিয়ে আনার জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন তার ভাইয়ের ছেলে ত্রিস্তানকে। কিন্তু সেই ভ্রমণে ত্রিস্তান এবং ইসলদে একে অপরের প্রেমে পড়ে যান। যদিও শেষ পর্যন্ত অ্যাইসোলেইড রাজা মার্ককেই বিয়ে করতে বাধ্য হন। কিন্তু ভালোবাসা অব্যাহত থাকে ত্রিস্তানের সঙ্গে। কিন্তু তাদের প্রেমের কথা রাজ্যে গোপন থাকে না। এক সময় এই প্রেম রাজা মার্কের নজরে আসে। তিনি তাদের দুজনকেই মাফ করে দেন, কিন্তু ত্রিস্তানকে কর্নওয়েলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ত্রিস্তান চলে যান ব্রিটানিতে। সেখানে তার সঙ্গে পরিচয় হয় আইসিলতের সঙ্গে। ইসলদের সঙ্গে এই তরুণীর নামের সাদৃশ্য ত্রিস্তানকে আইসিলতের প্রতি আকৃষ্ট করে। পরে ত্রিস্তান, আইসিলতের সঙ্গে নামের মিল থাকার কারণে আইসিলত নামক ওই রমণীকে বিয়ে করেন। কিন্তু এই বিয়ে কখনোই পূর্ণতা পায়নি, কারণ ত্রিস্তানের হƒদয় ছিল ইসলদের প্রেমে আচ্ছন্ন। এক পর্যায়ে ত্রিস্তান ইসলদের বিরহে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন। খবর পাঠান ইসলদের কাছে, যেন একবার ত্রিস্তানকে দেখে যান এবং একটি জাহাজ পাঠিয়ে দেন। তার স্ত্রী আইসিলতকে বলেছিলেন, ইসলদে যদি আসে তাহলে জাহাজের পালের রং হবে সাদা আর না আসতে চাইলে পালের রং হবে কালো। তার স্ত্রী জাহাজে সাদা পতাকা দেখতে পেয়েও তাকে জানান যে, জাহাজের পালের রং কালো। তখন ত্রিস্তান ভাললেন ইসলদে আর আসবে না। ত্রিস্তান ভাবলেন ইসলদের আর আসবেন না। তার ইসলদে তার কাছে পৌঁছানোর আগেই ত্রিস্তান মারা যান।
নেপোলিয়ান এবং জোসেফাইন
মহাবীর নেপোলিয়ান তার চেয়ে বয়সে বড়, বিখ্যাত এবং বিত্তশালী জোসেফাইনের প্রেমে পড়েন। তারা দুজনেই তাদের সম্পর্কের বিষয়ে শ্রদ্ধাবোধ এবং ত্যাগ বজায় রেখেছিলেন এবং সমঝোতার মাধ্যমে তারা বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা পরস্পরের প্রতি গভীর ভালোবাসায় নিমগ্ন হন। তাদের স্বভাব, আচার-আচরণে অনেক পার্থক্য ছিল, কিন্তু এগুলো তাদের প্রেমবন্ধনকে আরো দৃঢ় করেছে, ফলে তাদের ভালোবাসা কখনো ম্লান হয়ে যায়নি। কিন্তু পরিশেষে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে কারণ, নেপোলিয়ন খুব চাইতেন জোসেপাইনের গর্ভে যেন তার সন্তান হয়, কিন্তু মাতৃত্ব ধারণে অক্ষম ছিলেন জোসেপাইন। তাই জোসেফাইন নেপোলিয়ানের উত্তরাধিকার অর্জনের উচ্চাকাক্সক্ষা পূরণে ব্যর্থ হন। তাই পরস্পরের প্রতি গভীর আসক্তি এবং ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও তারা একত্রে জীবনযাপন করতে পারেননি।
লাইলি ও মজনু
মধ্যযুগের ইরানি কবি নিজামী তার কাব্য লাইলি-মজনুর জন্য ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। আরব মিথ ‘লাইলি-মজনু’ অবলম্বনে তিনি তার কাব্য রচনা করেন। অধরা প্রেমের এক বিয়োগান্ত গাথা এ কাব্য। কাব্য লিখিত হওয়ার আগে শতাব্দী থেকে শতাব্দীতে এই মিথ আরবে প্রচলিত ছিল। প্রেমের ইতিহাসে, বিশেষ করে এই উপমহাদেশীয় মুসলিম সমাজে কালজয়ী হয়ে ওঠে দুটি চরিত্র, লাইলি ও মজনু। স্বর্গীয় প্রেমের প্রতীক মানা হয় এই জুটিকে। বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে অর্থাৎ বাল্যকাল থেকেই লাইলি এবং কায়েস একে অপরের প্রেমে পড়েন। তাদের প্রেম সমাজের নজরে এলে দুজনের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ করা হয়। বলা আছে, লাইলির পিতা মজনুকে আহত করলে লাইলিও আহত হতো, এমনটি ছিল তাদের সেই স্বর্গীয় প্রেম। নিঃসঙ্গ কায়েস মরুপ্রান্তরে নির্বাসনে যান। বিরহকাতর কায়েসের ক্ষ্যাপাটে আচরণের জন্য তাকে ডাকা হতো মজনুন (পাগল) নামে। পরে বেদুইনের দল মজনুর হার না মানা ভালোবাসা দেখে তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে এবং তাদের মধ্যে এক বৃদ্ধ বেদুইন লড়াই করে লাইলিকে পাওয়ার জন্য কায়েসকে প্রেরণা দেন। তাদের সহযোগিতায় যুদ্ধে লাইলির গোত্র ক্ষমতাচ্যুত হয়, তারপরও লাইলির বাবা কায়েসের সঙ্গে লাইলির বিয়েতে সম্মতি দেন না। লাইলিকে তার পিতা জোর করে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেয়। স্বামী মারা যাওয়ার পর, যদিও লাইলি মজনুর কাছে ফিরে আসে, কিন্তু প্রচণ্ড দুঃখ আর অনাহারে মজনু মারা যায়। লাইলিও তার ভালোবাসা মজনুর পথ অনুসরণ করে। মৃত্যুর পর তাদের পাশাপাশি সমাধিস্থ করা হয়। ‘দুই দেহ এক আত্মা’ নামক বহুল প্রচলিত কথা এই যুগলের অনুপ্রেরণায় পাওয়া।
সেলিম ও আনারকলি
মুঘল সম্রাট আকবরের পুত্র সেলিম প্রেমে পড়েন রাজ্যের নর্তকী অনিন্দ্য সুন্দরী আনারকলির। আনারকলির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে প্রথম দর্শনেই তার প্রেমে পড়েন সম্রাটপুত্র সেলিম। সম্রাট আকবর এই সম্পর্ক কখনোই মেনে নেননি। সম্রাট আনারকলিকে সেলিমের চোখে খারাপ প্রমাণ করতে নানা ধরনের চক্রান্ত করেন। পিতার এ কৌশলের কথা জানামাত্র সেলিম নিজ পিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। কিন্তু শক্তিশালী আকবর বাহিনীর কাছে সেলিম খুব সহজেই পরাজিত নিজ সন্তানের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন আকবর। তখন প্রিয়তম সেলিমের জীবন বাঁচাতে আনারকলি নিজের জীবনের বিনিময়ে সেলিমের জীবন ভিক্ষা চান।
মেরি এবং পিয়েরি কুরি
রোমান্টিক জুটি বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে রোমিও-জুলিয়েট ও প্যারিস-হেলেনের কাহিনী অথচ দুনিয়া কাঁপানো এমন অনেক জুটি রয়েছে, যাদের প্রেমকাহিনী স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে ইতিহাসের পাতায়। এ রকম একটি জুটি হলো মেরি অ্যান্ড পিয়েরি কুরি। এ জুটির ছিল না কোনো লোকদেখানো কাজকর্ম, ছিল না কোনো বাড়াবাড়ি রকমের আবেগ। ছিল না কোনো পুরাণিক ট্র্যাজেডি, দেবদেবীর হস্তক্ষেপ কিংবা ছিল না কোনো অবৈধ কাহিনী। আধুনিক আর দশটা মানুষের মতোই ছিল তাদের প্রেমকাহিনী। কিন্তু ছিল একে অপরের প্রতি অগাধ অন্ধবিশ্বাস, তারা ছিলেন একে অপরের অনুপ্রেরণা! মানবতার কল্যাণে আর কাজের মধ্যেই এগিয়েছে তাদের প্রেম। পোল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয় নারীদের রিসার্চে অনুমতি দেয়নি বলে ১৮৯১ সালে রিসার্চ করতে মেরি গিয়েছিলেন ফ্রান্সের সর্বরনে। মেধাবী মেরিকে লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি সবখানেই আবিষ্কার করেন আরেক মেধাবী, ল্যাবরেটরি ডিরেক্টর পিয়েরি কুরি। কয়েকবার বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পর ১৮৯৫ সালে তারা বিয়ে করেন। ১৮৯৮ সালে এই বৈজ্ঞানিক যুগল আবিষ্কার করেন পলোনিয়াম আর রেডিয়াম। পদার্থ বিদ্যায় এবং রেডিও-আক্টিভিটিতে অবদানের জন্য এই দম্পতি ১৯০৩ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ১৯০৪ সালে পিয়েরি কুরি মারা যাওয়ার পর মেরি নিজের স্বামীর দেশেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং কুরির অসমাপ্ত কাজ শেষ করার চেষ্টা করেন। মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত স্বামী পিয়েরি কুরির বিভিন্ন রিসার্চ তিনি চালিয়ে যান।
রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট
রোমিও এবং জুলিয়েটের প্রেমের আখ্যান দুনিয়ার অন্যতম বিখ্যাত প্রেমকাহিনী। যেন ভালোবাসার অপর নাম রোমিও-জুলিয়েট। বিশ্ব বিখ্যাত ইংরেজ লেখক উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের কালজয়ী ট্র্যাজেডি হলো রোমিও-জুলিয়েট। সারা বিশ্বে যুগ যুগ ধরে পাঠকের হƒদয় ছুঁয়ে গেছে এ বিয়োগান্ত প্রেমকাহিনী। রোমিও আর জুলিয়েটের পরিবারের মধ্যে শত্রুতার সম্পর্ক ছিল। দুটি ভিন্ন পরিবারের পূর্ববর্তী রেষারেষি, বংশীয় অহঙ্কার ভেদ করে দু’জন তরুণ-তরুণী প্রথম দর্শনে প্রেমে পড়ে যায়। পরবর্তীতে পরিবারের শত বাধা উপেক্ষা করে নানা নাটকীয়তার মাঝে তারা বিয়ে করে। সবশেষে, দুই পরিবারের শত্রুতার জেরে এবং ভুল বোঝাবুঝির কারণে বিষপানে আত্মহত্যা করে এই প্রেমিক যুগল। তাই পৃথিবীতে যখনই প্রেমের জন্য ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা বলা হয়, সবার আগেই উঠে আসে এই তরুণ যুগলের নাম!
প্যারিস এবং হেলেন
ফিকশনের অপূর্ব এক সংমিশ্রণ হলো, লেখক কালজয়ী হোমারের জগদ্বিখ্যাত এপিক ‘ইলিয়াড।’ নাম করা সেই যুদ্ধের নাম হলো, ট্রোজান ওয়ার যে যুদ্ধে ধ্বংস হয়েছিল পুরো একটা শহর ট্রয়! ইতিহাসে যা হেলেন অব ট্রয় নামে বিখ্যাত। দেবরাজ জিউস এবং স্পার্টার রাজা টিন্ডারিউসের পতœী লিডার মিলনের ফলে শ্রেষ্ঠ সুন্দরী হেলেনের জš§ হয়। বিশ্বসাহিত্যে হেলেন সেরা সুন্দরীর আসনে অধিষ্ঠিত। স্পার্টার রাজা মেনিলাসের সঙ্গে হেলেনের বিয়ে হয়। ট্রয়ের ছোট রাজকুমার প্যারিস হেলেনের প্রেমে পাগল হয়ে অপহরণ করে তার রাজ্যে নিয়ে এসেছিলেন। হেলেনকে উদ্ধারে মেনিলাসের ভাই অ্যাগামেমননের নেতৃত্বে বিরাট গ্রিক সেনাদল ট্রয়ের অভিমুখে যাত্রা করে। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে চলে এই ঐতিহাসিক যুদ্ধ। যুদ্ধের এক পর্যায়ে গ্রিক সৈন্যরা ট্রয় রাজ্যে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তের মধ্যে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে ট্রয়নগর। আগুনে পুড়ে হাজার হাজার সৈন্য আর নিরীহ নাগরিক মারা যায়। গ্রীক বীর একিলিসও হেলেনের অন্যতম পাণিপ্রার্থী ছিলেন। তাই একিলিস ছুটে যায় হেলেনকে বাঁচানোর আশায়; কিন্তু প্যারিস তীর বিদ্ধ করে মেরে ফেলে একিলিসকে। পালিয়ে যায় হেলেন, জয়লাভ করে গ্রিকরা। কিন্তু যে হেলেনের জন্য এতকিছু তাকে মেনেলাউস কাছে পেয়েছিল কিনা তা আজো অজানা।
ত্রিস্তান অ্যান্ড ইসলদে
এটি মধ্যযুগে রাজা আর্থারের রাজত্বকালের ঘটনা। ইসলদে ছিলেন আয়ারল্যান্ডের রাজকন্যা। ছিলেন কর্নওয়েলের রাজা মার্কের বাগদত্তা। তিনি রাজকুমারী অ্যাইসোলেইডকে নিজ রাজ্য কর্নওয়েলে ফিরিয়ে আনার জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন তার ভাইয়ের ছেলে ত্রিস্তানকে। কিন্তু সেই ভ্রমণে ত্রিস্তান এবং ইসলদে একে অপরের প্রেমে পড়ে যান। যদিও শেষ পর্যন্ত অ্যাইসোলেইড রাজা মার্ককেই বিয়ে করতে বাধ্য হন। কিন্তু ভালোবাসা অব্যাহত থাকে ত্রিস্তানের সঙ্গে। কিন্তু তাদের প্রেমের কথা রাজ্যে গোপন থাকে না। এক সময় এই প্রেম রাজা মার্কের নজরে আসে। তিনি তাদের দুজনকেই মাফ করে দেন, কিন্তু ত্রিস্তানকে কর্নওয়েলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ত্রিস্তান চলে যান ব্রিটানিতে। সেখানে তার সঙ্গে পরিচয় হয় আইসিলতের সঙ্গে। ইসলদের সঙ্গে এই তরুণীর নামের সাদৃশ্য ত্রিস্তানকে আইসিলতের প্রতি আকৃষ্ট করে। পরে ত্রিস্তান, আইসিলতের সঙ্গে নামের মিল থাকার কারণে আইসিলত নামক ওই রমণীকে বিয়ে করেন। কিন্তু এই বিয়ে কখনোই পূর্ণতা পায়নি, কারণ ত্রিস্তানের হƒদয় ছিল ইসলদের প্রেমে আচ্ছন্ন। এক পর্যায়ে ত্রিস্তান ইসলদের বিরহে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন। খবর পাঠান ইসলদের কাছে, যেন একবার ত্রিস্তানকে দেখে যান এবং একটি জাহাজ পাঠিয়ে দেন। তার স্ত্রী আইসিলতকে বলেছিলেন, ইসলদে যদি আসে তাহলে জাহাজের পালের রং হবে সাদা আর না আসতে চাইলে পালের রং হবে কালো। তার স্ত্রী জাহাজে সাদা পতাকা দেখতে পেয়েও তাকে জানান যে, জাহাজের পালের রং কালো। তখন ত্রিস্তান ভাললেন ইসলদে আর আসবে না। ত্রিস্তান ভাবলেন ইসলদের আর আসবেন না। তার ইসলদে তার কাছে পৌঁছানোর আগেই ত্রিস্তান মারা যান।
নেপোলিয়ান এবং জোসেফাইন
মহাবীর নেপোলিয়ান তার চেয়ে বয়সে বড়, বিখ্যাত এবং বিত্তশালী জোসেফাইনের প্রেমে পড়েন। তারা দুজনেই তাদের সম্পর্কের বিষয়ে শ্রদ্ধাবোধ এবং ত্যাগ বজায় রেখেছিলেন এবং সমঝোতার মাধ্যমে তারা বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা পরস্পরের প্রতি গভীর ভালোবাসায় নিমগ্ন হন। তাদের স্বভাব, আচার-আচরণে অনেক পার্থক্য ছিল, কিন্তু এগুলো তাদের প্রেমবন্ধনকে আরো দৃঢ় করেছে, ফলে তাদের ভালোবাসা কখনো ম্লান হয়ে যায়নি। কিন্তু পরিশেষে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে কারণ, নেপোলিয়ন খুব চাইতেন জোসেপাইনের গর্ভে যেন তার সন্তান হয়, কিন্তু মাতৃত্ব ধারণে অক্ষম ছিলেন জোসেপাইন। তাই জোসেফাইন নেপোলিয়ানের উত্তরাধিকার অর্জনের উচ্চাকাক্সক্ষা পূরণে ব্যর্থ হন। তাই পরস্পরের প্রতি গভীর আসক্তি এবং ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও তারা একত্রে জীবনযাপন করতে পারেননি।
লাইলি ও মজনু
মধ্যযুগের ইরানি কবি নিজামী তার কাব্য লাইলি-মজনুর জন্য ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। আরব মিথ ‘লাইলি-মজনু’ অবলম্বনে তিনি তার কাব্য রচনা করেন। অধরা প্রেমের এক বিয়োগান্ত গাথা এ কাব্য। কাব্য লিখিত হওয়ার আগে শতাব্দী থেকে শতাব্দীতে এই মিথ আরবে প্রচলিত ছিল। প্রেমের ইতিহাসে, বিশেষ করে এই উপমহাদেশীয় মুসলিম সমাজে কালজয়ী হয়ে ওঠে দুটি চরিত্র, লাইলি ও মজনু। স্বর্গীয় প্রেমের প্রতীক মানা হয় এই জুটিকে। বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে অর্থাৎ বাল্যকাল থেকেই লাইলি এবং কায়েস একে অপরের প্রেমে পড়েন। তাদের প্রেম সমাজের নজরে এলে দুজনের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ করা হয়। বলা আছে, লাইলির পিতা মজনুকে আহত করলে লাইলিও আহত হতো, এমনটি ছিল তাদের সেই স্বর্গীয় প্রেম। নিঃসঙ্গ কায়েস মরুপ্রান্তরে নির্বাসনে যান। বিরহকাতর কায়েসের ক্ষ্যাপাটে আচরণের জন্য তাকে ডাকা হতো মজনুন (পাগল) নামে। পরে বেদুইনের দল মজনুর হার না মানা ভালোবাসা দেখে তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে এবং তাদের মধ্যে এক বৃদ্ধ বেদুইন লড়াই করে লাইলিকে পাওয়ার জন্য কায়েসকে প্রেরণা দেন। তাদের সহযোগিতায় যুদ্ধে লাইলির গোত্র ক্ষমতাচ্যুত হয়, তারপরও লাইলির বাবা কায়েসের সঙ্গে লাইলির বিয়েতে সম্মতি দেন না। লাইলিকে তার পিতা জোর করে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেয়। স্বামী মারা যাওয়ার পর, যদিও লাইলি মজনুর কাছে ফিরে আসে, কিন্তু প্রচণ্ড দুঃখ আর অনাহারে মজনু মারা যায়। লাইলিও তার ভালোবাসা মজনুর পথ অনুসরণ করে। মৃত্যুর পর তাদের পাশাপাশি সমাধিস্থ করা হয়। ‘দুই দেহ এক আত্মা’ নামক বহুল প্রচলিত কথা এই যুগলের অনুপ্রেরণায় পাওয়া।
সেলিম ও আনারকলি
মুঘল সম্রাট আকবরের পুত্র সেলিম প্রেমে পড়েন রাজ্যের নর্তকী অনিন্দ্য সুন্দরী আনারকলির। আনারকলির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে প্রথম দর্শনেই তার প্রেমে পড়েন সম্রাটপুত্র সেলিম। সম্রাট আকবর এই সম্পর্ক কখনোই মেনে নেননি। সম্রাট আনারকলিকে সেলিমের চোখে খারাপ প্রমাণ করতে নানা ধরনের চক্রান্ত করেন। পিতার এ কৌশলের কথা জানামাত্র সেলিম নিজ পিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। কিন্তু শক্তিশালী আকবর বাহিনীর কাছে সেলিম খুব সহজেই পরাজিত নিজ সন্তানের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন আকবর। তখন প্রিয়তম সেলিমের জীবন বাঁচাতে আনারকলি নিজের জীবনের বিনিময়ে সেলিমের জীবন ভিক্ষা চান।
মেরি এবং পিয়েরি কুরি
রোমান্টিক জুটি বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে রোমিও-জুলিয়েট ও প্যারিস-হেলেনের কাহিনী অথচ দুনিয়া কাঁপানো এমন অনেক জুটি রয়েছে, যাদের প্রেমকাহিনী স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে ইতিহাসের পাতায়। এ রকম একটি জুটি হলো মেরি অ্যান্ড পিয়েরি কুরি। এ জুটির ছিল না কোনো লোকদেখানো কাজকর্ম, ছিল না কোনো বাড়াবাড়ি রকমের আবেগ। ছিল না কোনো পুরাণিক ট্র্যাজেডি, দেবদেবীর হস্তক্ষেপ কিংবা ছিল না কোনো অবৈধ কাহিনী। আধুনিক আর দশটা মানুষের মতোই ছিল তাদের প্রেমকাহিনী। কিন্তু ছিল একে অপরের প্রতি অগাধ অন্ধবিশ্বাস, তারা ছিলেন একে অপরের অনুপ্রেরণা! মানবতার কল্যাণে আর কাজের মধ্যেই এগিয়েছে তাদের প্রেম। পোল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয় নারীদের রিসার্চে অনুমতি দেয়নি বলে ১৮৯১ সালে রিসার্চ করতে মেরি গিয়েছিলেন ফ্রান্সের সর্বরনে। মেধাবী মেরিকে লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি সবখানেই আবিষ্কার করেন আরেক মেধাবী, ল্যাবরেটরি ডিরেক্টর পিয়েরি কুরি। কয়েকবার বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পর ১৮৯৫ সালে তারা বিয়ে করেন। ১৮৯৮ সালে এই বৈজ্ঞানিক যুগল আবিষ্কার করেন পলোনিয়াম আর রেডিয়াম। পদার্থ বিদ্যায় এবং রেডিও-আক্টিভিটিতে অবদানের জন্য এই দম্পতি ১৯০৩ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ১৯০৪ সালে পিয়েরি কুরি মারা যাওয়ার পর মেরি নিজের স্বামীর দেশেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং কুরির অসমাপ্ত কাজ শেষ করার চেষ্টা করেন। মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত স্বামী পিয়েরি কুরির বিভিন্ন রিসার্চ তিনি চালিয়ে যান।
COMMENTS